‘কিছুদিন পর ওই বাসায় একটি যৌথ পরিবার আসে। সেই পরিবারে ১৩ বছর বয়সী একটি মেয়েও ছিল। একদিন দেখলাম মেয়েটি বাসার বারান্দায় বসে কাঁদছে। এরপর সুযোগ বুঝে আমি মেয়েটির সঙ্গে কথা বলি।’
Published : 02 Apr 2024, 05:57 PM
দুই বছর আগের কথা। তখন আমরা রাজধানীর শাহজাহানপুরের একটি বাসায় থাকতাম। আমাদের ভবনের পাশেই ছিল আরেকটি বাসা। আমাদের বারান্দা থেকে সে বাসার বারান্দা স্পষ্ট দেখা যেত।
কিছুদিন পর ওই বাসায় একটি যৌথ পরিবার আসে। সেই পরিবারে ১৩ বছর বয়সী একটি মেয়েও ছিল। একদিন দেখলাম মেয়েটি বাসার বারান্দায় বসে কাঁদছে। এরপর সুযোগ বুঝে আমি মেয়েটির সঙ্গে কথা বলি।
একদিন তাকে বাজারে যেতে বলা হলে সে লুকিয়ে আমাদের বাসায় চলে আসে। তখন জানতে পারি, মেয়েটির বাবা নেই আর মা দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। সৎ বাবা তাকে মেনে নিচ্ছেন না। তাই নানা বাড়িতে সে বোঝা হয়ে আছে।
এখানে তাকে অনেক কাজ করতে হয়। আর এ পরিবারের সবাই চায় তাকে বিয়ে দিতে। কিন্তু তাতে সে রাজি নয়।
মেয়েটি আমাদের বাসায় থাকতে চাইল। মা তাকে আমার খালামণির বাসায় থাকার সুযোগ করে দেন। সেখানে সে থাকতে শুরু করার পর আমি এবং আমার বোন তাকে নিজেদের পরিবারের একজন ভাবতাম। তাকে নিয়ে আমরা অনেক জায়গায় ঘুরতাম। তাকে কিছু বইও কিনে দেই, সে পড়াশোনাও করত।
ভালোই কাটছিল তার দিন। আমরাও তার ভালো থাকা দেখে আনন্দিত ছিলাম। কিন্তু একদিন খালামণির কাছে একজন ফোন করে জানায় যে, মেয়েটিকে তার সৎ বাবা মেনে নেবেন।
এটা শুনে আমরা অনেক খুশি হই। এরপর সে বাসা ছেড়ে চলে যায়। যাওয়ার পর থেকে তার সঙ্গে দুই বছর ধরে আমাদের কোনো যোগাযোগ হয়নি। এক মাস আগে তার সঙ্গে রাস্তায় দেখা হয়। তখন সে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
সে জানায়,তাকে ফাঁদে ফেলে অসত্য বলে বাবা-মায়ের কাছে নেওয়া হয়। সেখানে যাওয়ার পর তার উপর অনেক নির্যাতন করা হয়। তার চেয়ে বয়সের দ্বিগুণ বয়সের এক ব্যক্তির সঙ্গে তাকে জোরপূর্বক বিয়ে দেয় তার বাবা-মা।
সেই কিশোরী বর্তমানে চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা, অথচ তার বয়স কেবল ১৫ বছর। এ বয়সে গর্ভবতী হওয়ায় শারীরিকভাবেও দুর্বল হয়ে পড়েছে সে। অসুস্থতার মধ্যেও শ্বশুর বাড়ির যাবতীয় কাজ তাকে করতে হয়। এর অন্যথা হলে খাবার বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়।
স্বাভাবিক জীবনে ফেরা এই মেয়েটির জন্য এখন অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। তবুও সে পড়াশোনা করে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৬। জেলা: ঢাকা।