‘আমি গিয়ে আঁখিকে সরাসরি প্রশ্ন করে বসি, তুমি আর পড়াশোনা করবে না? এত তাড়াতাড়ি বিয়ে কেন করছো?’
Published : 06 Nov 2022, 06:28 PM
বছর খানেক আগে এসএসসি পরীক্ষা শেষে আমি গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে অনেকটা ধাক্কা খেতে হয়েছে আমাকে।
ছোটবেলা থেকেই গ্রামের প্রতি আমার অনেক ভালোবাসা রয়েছে। সেখানে আমার অনেক বন্ধু আছে। বন্ধুদের জন্যই মূলত গ্রামের প্রতি এমন টান তৈরি হয় আমার। বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলব, দেখা হবে এই আশাতেই থেকেছি।
আমার কাছের এক বন্ধুর নাম আঁখি। সে আমার দুই বছরের ছোট। গ্রামে গিয়ে শুনি তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। শোনার পর আমি কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে যাই!
আমি কোনোভাবেই মনকে বোঝাতে পারছিলাম না, আমার থেকে ছোট একটা মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে এটা কেমন কথা! সে বিয়ের কী বোঝে কিংবা সে বিয়ের মতো বোঝা এই শিশু বয়সে কীভাবে বয়ে বেড়াবে!
আমি গিয়ে আঁখিকে সরাসরি প্রশ্ন করে বসি, তুমি আর পড়াশোনা করবে না? এত তাড়াতাড়ি বিয়ে কেন করছো?
আঁখি আমাকে জবাব দেয়, মা বলেছে পড়াশোনা করে কোনো লাভ নেই। মেয়েদের ঘর আর সংসারই সব। অর্থাৎ তার মায়ের ইচ্ছাতে বিয়ে হচ্ছে তার এবং সে মেনে নিয়েছে সেটা।
আমি কোনো উত্তর খুঁজে পাইনি, কিছুক্ষণ শুধু বোকা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম! তাকে যা বোঝানো হয়েছে ও তাই বুঝেছে। তার মায়ের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম অভাবের কারণেই মেয়েকে যত দ্রুত সম্ভব বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন তারা।
আমি বুঝিয়েছি তাদের। একটা শিশুকে বিয়ে দিলে তার জীবন কতটা ঝুঁকিপূর্ণ সেটাই বলতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু তিনি কোনো কথাই আমলে নেননি। যখন বললাম আমাদের দেশের আইন বেশ কড় বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে, জেল ও জরিমানার বিধান রয়েছে, তখন তিনি অসহায়ত্ব প্রকাশ করছিলেন।
বাল্যবিয়ের লাগাম টেনে ধরতে হবে এখনি। এই শিশুদের জীবনগুলো নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৭। জেলা: গাইবান্ধা।