কুড়িগ্রাম জেলা শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার উত্তরে গেলেই দেখা মিলবে অতি প্রাচীন এক বৃক্ষের। স্থানীয়রা এটাকে 'অচিন গাছ' বলেই চেনে।
কেউ কেউ বলে থাকে এই গাছের বয়স পাঁচশ বছর। অপরিচিত বলেই লোক মুখে এর নাম হয়ে যায় অচিন গাছ।
কত বছর আগে এর জন্ম তাও জানেন না কেউ। গাছটিকে এক নজর দেখার জন্য প্রতিদিন দূর-দূরান্তের অনেক দর্শণার্থী আসেন।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় ওমর মজিদ ইউনিয়নের জয়দেব হায়াত গ্রামে মৃত দর্পণ নারায়ণের বাড়িতে গেলেই দেখা মিলবে এই গাছের। নারায়ণ পরিবারের তিন প্রজন্মের কেউই জানেন না গাছের জন্ম বৃত্তান্ত। কিছুই বলতে পারেন না স্থানীয় বাসিন্দারাও।
স্থানীয় বাসিন্দাদের কারো কারো মতে গাছটির বয়স কমপক্ষে পাঁচশ বছর। এর আগে গাছটির শাখা-প্রশাখা প্রায় ২০ শতক জমি জুড়ে বেশ বিস্তীর্ণ ছিল। গাছের ডালপালার জন্য রোদ পড়ত না আশেপাশের বাড়িগুলোতে। ফলে দূর-দূরান্তে গিয়ে তাদের ধান-পাট শুকাতে হতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গাছটির শাখা-প্রশাখা কমে গেছে। বর্তমানে গাছটি প্রায় ১০ শতাংশের কম জমির নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
গাছটির পাতাগুলো ডুমুর পাতার মতো হলেও তত খসখসে নয়, মসৃণ। সারা বছর ধরে গাছে পাতা দেখতে পাওয়া যায়। এ গাছের পাতার রস সাদা বর্ণের।
কথিত আছে, এ গাছ থেকে ফল মাটিতে পড়লেও বীজ থেকে কোনো নতুন গাছ জন্মায় না। এছাড়া অনেক আগে গাছটিতে বিশাল আকৃতির বিষাক্ত সাপ বসবাস করত। কিন্তু এসব সাপ মানুষের কোনো ক্ষতি করেনি বলেও নানা গল্প প্রচলিত আছে।
অনেকের ধারণা, বর্তমান ভারতের আসাম রাজ্যের কামরূপ-কামাখ্যা থেকে আগত একদল জাদুকর এ গাছটি চোখের পলকে উড়িয়ে এনে বর্তমান স্থানে লাগিয়ে দেন। গাছটির নাম কেউ জানতেন না। তখন থেকেই এ গাছটি ‘অচিন গাছ’ নামে পরিচিত।
অপর এক কাহিনী থেকে জানা যায়, কোনো এক অজানা পীর পশ্চিম দিক থেকে এসে গাছটির চারা এনে এখানে রোপণ করেছিলেন।
গাছটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন মন্দির। প্রতিদিন সন্ধ্যায় সনাতন ধর্মের লোকজন এখানে এসে পূজা-অর্চনা করেন, দান বাক্সে দক্ষিণা দেন। অনেকে গাছটির গোড়ায় এসে মানত করে।
তবে অযত্ন, অবহেলা আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে গাছটির চারদিকে জঙ্গলে পরিপূর্ণ হয়েছে।
প্রায় ১৬ বছর আগে রাজারহাট উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গাছ তলা পাকা করে দেওয়া হয়। এরপর কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকে ২০১৬ সালে গাছটির চারপাশে সৌন্দর্য বর্ধন করা হয় । কিন্তু পরবর্তীতে যত্ন না করায় সেগুলোও নষ্ট হবার পথে।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৬। জেলা: কুড়িগ্রাম।