নানা ধর্ম-বর্ণ-পেশার মানুষ রূপনগরের ঝিলপাড় বস্তিতে এসে ব্যতিক্রমধর্মী এক সমাজ গড়ে তুলেছেন, যেটা শহরের নাগরিক জীবনে পাওয়া বেশ কষ্টকর।
Published : 18 Nov 2019, 09:41 PM
রাজধানীর রূপনগরের ঝিলপাড় বস্তির যে ঘরে বসে সুনীতি বিশ্বাস ভগবানকে ডাকেন; বেড়ার অপর পাশে চলে নামাজ, কোরআন পাঠ। কোন রকম ঝগড়া বিবাদ ছাড়া তারা পার করে দিচ্ছেন মাসের পর মাস।
ভিন্ন ধর্মের মানুষের কেবল পাশাপাশি বসবাসই নয়, বরং তারা একই রান্নাঘরে রান্না করেন। রান্না বা গোসলের পানি সংগ্রহ করেন একই জায়গা থেকে। ব্যবহার করেন একই টয়লেট।
সুনীতির ভাষায়, বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এক জায়গায় বসবাস করি। মিলেমিশে এক জায়গায় থাকি। এক জায়গায় রান্না করি, এক জায়গায় খাওয়া দাওয়া করি।
নিম্ন আয়ের এসব পরিবারের নতুন প্রজন্ম পড়াশোনা করলেও বয়স্কদের অনেকেরই নেই কোন শিক্ষা। কেউ কেউ স্কুলে গেলেও সেই পাঠ চুকিয়ে নেমে যেতে হয়েছে জীবন সংগ্রামে। দারিদ্রতার কষাঘাত তাদেরকে একত্রিত করেছে রূপনগরের এই বস্তিতে।
দুইবোন আর স্বামী-সন্তানকে নিয়ে ২ বছর ধরে এই বস্তিতে বাস করা সুনীতি বলছেন, তার সঙ্গে প্রতিবেশিদের কারো ঝগড়াও হয় না।
এই বস্তির অধিবাসীদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, নানা মত-পথ-ধর্ম-পেশা-এলাকার মানুষ এখানে এমন সমাজ গড়ে তুলেছেন, যেটা শহরের জীবনে পাওয়া বেশ কষ্টকরই বটে।
একত্রে বসবাস করতে গিয়ে তাদের কারো কারো সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ হলেও পরক্ষণেই সেটা ভুলে যান আত্মীয়ের মতই।
বস্তির এই পরিবেশের কথা উল্লেখ করে এখানকার অপর এক বাসিন্দা মোরশেদা খাতুন হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বস্তিতে থাকলে কী হবে-বস্তির লোক হিসেবে আমরা অনেক সুখে আছি।
তিনি বলেন, আমরা ১২ দেশের মানুষ এখানে ভাই-বোনের মত চলাফেরা করি। টিনশেড বা ফ্ল্যাটের মানুষও এতটা সুখে থাকে না। আমাদের কারো অসুখ হলে বা কেউ বিপদে আপদে পড়লে এক ঘরের মানুষ আরেক ঘরের মানুষকে সহযোগিতা করে। দেখেশুনে রাখে। ফ্ল্যাটে-টিনশেডে এ রকম হয় না। (সেখানে) যে যার মত থাকে।
মিলেমিশে থাকার এই প্রবণতার প্রভাব পড়েছে এখানে বাস করা শিশুদের উপরও। একত্রে খেলাধুলা-পড়াশোনা-আড্ডা-হৈ চৈ-এ তারা মাতিয়ে রাখেন তাদের ব্যতিক্রম এই সমাজ।
শিশুরাও একই সাত্থে খেলাধুলা করে । দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মারুফ হোসেন বলে, “আমরা একই সাথে পড়াশুনা করি”।
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ময়না আক্তার হ্যালোকে বলে, “ আমরা সবাই বন্ধুর মত থাকি”।