শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাস্থ্যকর স্যানিটেশন ব্যবস্থা রাখার পরিপত্র জারি করলেও বিভিন্ন বিদ্যালয়ে তা মানা হচ্ছে না।
Published : 28 Jan 2019, 06:27 PM
বগুড়া জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই এই নির্দেশনা মানছে না।
জেলার সদর, শেরপুর, ধুনট, সারিয়াকান্দি উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক, কিন্ডার গার্টেন, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা হ্যালোকে এ বিষয়ে অভিযোগ করে।
২০১৫ সালের ২৩ জুন স্যানিটেশন ব্যবহার উন্নয়নে ১১টি নির্দেশনা জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষার্থীর উপস্থিতি বাড়াতে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটিকে টয়লেট ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতের নির্দেশনাও দেওয়া হয় পরিপত্রে।
পরিপত্রে টয়লেটে ঢাকনাযুক্ত প্লাস্টিকের পাত্র রাখা, জেন্ডারবান্ধব স্যানিটেশন নিশ্চিত করা, ছাত্রীদের পিরিয়ডের বিষয়ে একজন শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়াসহ ১১টি নির্দেশনা দেওয়া আছে।
জেলার বেলঘরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীর জন্য একটি টয়লেট আছে, তবে তা নাজুক!
ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মো. নাঈম ইসলাম (১১) বলে, "আমাদের টয়লেট খুবই অপরিষ্কার, ব্যবহার করা যায় না।"
আজমিয়ারা (১০) আরেক শিক্ষার্থী বলে, "কল থেকে পানি নিয়ে গিয়ে টয়লেটে যেতে হয়। আর সাবানও নাই।"
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষাক কেএম নূরুন্নাহার হ্যালোকে বলেন, "এটা দীর্ঘদিনের সমস্যা। আগে আমাদের শিক্ষাকদের টয়লেট ছিল না, এখন হয়ছে। এটাও আস্তে আস্তে হবে।"
দুইটি টয়লেটের একটি পরিত্যক্ত থাকলেও জামুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ছেলে ও মেয়ে শিশুর জন্য এখানে একটিই টয়লেট রয়েছে।
জেলার নদীভাঙন কবলিত এলাকা সারিয়াকান্দি উপজেলার চরঘাগুয়া সুর্যমুখী প্রাথমিক বিদ্যালয়, টেংরাকুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জামথল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সজিব ওয়াজেদ অটিজম বিদ্যালয়ে গিয়ে কথা হয় সংশ্লিষ্ট ও ভুক্তভোগিদের সঙ্গে।
টয়লেট তো দূরের কথা, টিউবওয়েলও পানি ওঠে না চরঘাগুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
তবে ভিন্ন কথা জানালেন সদরের ভাণ্ডারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়েরর প্রধান শিক্ষক। তিনি বলেন, "মেয়েদের ঋতুস্রাবের কথা চিন্তা করে স্কুলেই স্যানেটারি ন্যাপকিন রাখা হয়েছে।”
সহকারী শিক্ষক ফাতেমা চৌধুরী বলেন, "আগের থেকে মেয়েরা অনেক সচেতন। আর তাদের সঙ্গে পিরিয়ড নিয়ে আলোচনায় কোনো সমস্যা হয় না।"
এদিকে সংক্রামক থেকে দূরে থাকতে ঋতুস্রাবকালে পুরাতন কাপড় ব্যবহার না করে স্যানিটারি প্যাড ব্যবহারের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
রাজশাহী বারিন মেডিকেল হাসপাতালের স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ হাসিনা আকতার মোবাইল ফোনে হ্যালোকে বলেন, "প্রাইমারি স্কুলে মেয়েদের জন্য পরিষ্কার ও ব্যবহার উপযোগী টয়লেট থাকা জুরুরি।
“ঋতুকালে যেন তারা বিদ্যালয়ে স্যানিটেশনের সুবিধা পায় সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।”
রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ইকবাল বারী বলেন, “আমি অনেক ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুকে দেখেছি, তাদের অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি বাচ্চাদের স্কুলের টয়লেটই অস্বাহ্যকর।”
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বলেন, " সমাবেশে শিক্ষকদের এ বিষয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের জানানোর জন্য বলেছি। অভিযোগ পেলে যেখানে টয়লেট নেই, সেখানে ব্যবস্থা করার চেষ্টা করব।"
বিষয়টি নিয়ে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের তৎপরতার কথা জানতে চাইলে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সামাদ বলেন, "আমরা সবসময়ই তৎপর। সরকারের বড় বাজেট রয়েছে এই খাতে।
“এ সংক্রান্ত অভিযোগ পেলে আমরা 'শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের' মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা করি।”
ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে শতকার ৮৪ ভাগ বিদ্যালয়ে টয়লেট থাকলেও সেগুলোর মাত্র ২৪ ভাগ উন্নত, ব্যবহারোপযোগী ও পরিচ্ছন্ন। প্রতিবন্ধী শিশুদের ব্যবহার উপযোগী পয়ঃনিষ্কাশন অবকাঠামোর অভাব রয়েছে। এছাড়া মাত্র ২২ শতাংশ স্কুলে মেয়েদের জন্য আলাদা টয়লেট আছে।