সচ্ছল পরিবারের শিশুদের ঈদ আনন্দ উল্লাসের মধ্যে কাটলেও অসচ্ছল পরিবারের শিশুদের ঈদ কাটে অনেকটা দুঃখের মধ্যে।
Published : 28 Jun 2017, 08:12 PM
ঈদের দিনও অনেক সুবিধাবঞ্চিত শিশুই পেট ভরে খেতে পারে না। নতুন পোশাকও জুটেনি কারো কারো ভাগ্যে।
ঈদের দিন ও পরের দিন ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার সুবিধাভোগী ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সাথে ঈদ উৎসব নিয়ে কথা হয় হ্যালোর।
সচ্ছল পরিবারের শিশুদের সঙ্গে কথা হয় পীরগঞ্জের ফানসিটি শিশু পার্কে। মা বাবার হাত ধরে ঘুরতে এসেছে ওরা। ওদের পরনে নতুন পোশাক।
ব্যবসায়ী বাবার সাথে ঘুরতে আসা শিশু তামিম জানায়, ঈদে নতুন জামা, প্যান্ট ও জুতা কিনে দিয়েছে ওর বাবা। সেই সাথে ঈদ সেলামি পেয়েছে দুই হাজার টাকা।
নিশাত রহমান নামের আরেক শিশু বলে, “ঈদে বাবার সাথে ঘুরছি, ইচ্ছে মতো মজার খাবার খাচ্ছি। পার্কে এসে ট্রেনে চড়লাম। এখন নৌকায় চড়ব। খুবই মজা হচ্ছে।”
ওর বাবা ও মা দুজনই সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক।
রিহান ইসলাম নামে এক শিশু বলে, “সকালে সেমাই খেয়ে ঈদের নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম।এখন পোলাও-মাংস খেয়ে ঘুরতে এলাম পার্কে।”
ঈদের পরদিন পীরগঞ্জ রেল স্টেশন এলাকায় একদল সুবিধাবঞ্চিত শিশুর সাথে কথা হয়। ওদের অনেকের ভাগ্যে ঈদের নতুন কাপড় জোটেনি। পুরনো কাপড়েই ঘুরতে বেড়িয়েছিল ওরা।
ওদের কেউ টোকাই আবার কেউ ভিক্ষে করে স্টেশনে।
টোকাই শুক্রু বলে, “সকালে সেমাই-মুড়ি খেয়ে ঈদের নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম। বাবা দিয়েছিল ২৫ টাকা। ঈদগাহে ১০ টাকার খাবার খাইছি আর পাঁচ টাকা দিয়ে হাতে রং লাগাইছি। আবার বাড়িতে এসে বাবার কাছে ১০ টাকা নিছি। পরে ২০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে পার্কে ঢুকছিলাম।’
পার্কে বিভিন্ন রাইডে চড়তে মন চাইলেও টাকার জন্য সেই ইচ্ছে পূরণ হয়নি বলে জানায় ও।
নূরনবী রানা নামের আরেক শিশু বলে, ‘আমিও পার্কে গিয়েছিলাম ঘুরতে। আমার মতো অনেক ছোট ছোট বাচ্চারা সুন্দর সুন্দর জামা পরে ঘুরতে এসেছিল বাবা-মায়ের সাথে। কিন্তু আমার সাথে তো আর বাবা-মা যায়নি।”
নুতন পোশাক আর ভালো খাবার না পেলেও বন্ধুরা মিলে পার্কে ঘুরে, সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখে ঈদের দিন কাটিয়েছে এদের অনেকে।
জসিম নামের এক শিশু বলে, “ঈদের দিন ঈদগাহে ভিক্ষা করে ১৮০ টাকা পেয়েছি। সেই টাকায় ঘুরেছে ও খেয়েছে।”
বন্ধুদের সাথে সিনেমা হলে গিয়ে সাকিব খানের সিনেমা দেখেছে মোহাম্মদ আকাশ।
ও বলে, “নতুন জামা কিনতে পারিনি। যা টাকা জমানো ছিল তা দিয়েই ঘুরেছি। বাবা-মা তো টাকা দেয় না। অভাবের মধ্যেই আমাদের দিন কাটে।’
ঈদের দিন পোলাও-মাংস খাওয়া হয়নি ওদের কারো। সেমাই খেয়েই কেটেছে ঈদের দিন।
মোহাম্মদ সবুজ নামের আরেক শিশু জানায়, মায়ের ভিক্ষেই চলে সংসার, বাবা অনেক আগে মারা গেছেন।
সবুজ বলে, “ঈদের দিন সেমাই-মুড়ি ছাড়াও গোস্ত-ভাত খাওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু টাকা নাই। মায়ে গরুর গোস্ত কিনতে পারে নাই।”