বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১৯ সালে।
Published : 02 Aug 2022, 09:30 PM
নবজাতকের জন্মের প্রথম ছয় মাস মাতৃদুগ্ধ পানের বিকল্প নেই। কেননা মায়ের দুধে থাকে একটি শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টির সকল উপাদান। মাতৃদুগ্ধ নবজাতকের প্রথম টিকা হিসেবেও কাজ করে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
কিন্তু মায়ের অসুস্থতা, মৃত্যুসহ নানা কারণে অনেক শিশু তার মায়ের দুধ পান করতে পারে না। এতে শিশু অপুষ্টিতে যেমন ভুগতে পারে, তেমনি নানা শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এমন পরিস্থিতিতে পড়ে একটি শিশু যাতে বুকের দুধ থেকে বঞ্চিত না হয় তাই পৃথিবীর অনেক দেশে চালু রয়েছে হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক বা মাতৃদুগ্ধ সংরক্ষণাগার। যেসব মায়েদের নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে কিংবা সন্তানকে খাওয়ানোর পরও অতিরিক্ত দুধ আছে তারা মাতৃদুগ্ধ ব্যাংকে তা সংরক্ষণ করতে পারেন৷ যেসব শিশুরা মায়ের বুকের দুধ থেকে বঞ্চিত তারা সেখান থেকে দুধ পানের সুযোগ পায়৷
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এক প্রতিবেদন থেকে জানতে পেরেছি, এতিম-বিপন্ন শিশুদের জন্য বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১৯ সালে। ঢাকার মাতুয়াইলের সরকারি শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (আইসিএমএইচ) বিদেশ থেকে নানা আধুনিক যন্ত্রপাতি আনে উদ্যোগটি বাস্তবায়নের জন্য।
এই পরিকল্পনা শুনেই হালাল-হারামের বিষয় জড়িয়ে আছে জানিয়ে উদ্যোগের বিরোধিতায় নামেন ওলামাদের একটি অংশ। এতে আইনগত ও ধর্মীয় সমস্যা তৈরি হবে দাবি করে উকিল নোটিসও পাঠানো হয়। এরপর আর আইসিএমএইচ এই উদ্যোগ নিয়ে এগোয়নি।
‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ আটকে ধর্মীয় বিতর্কে
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ওই ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকের’ সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. মজিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ২০১৭ সালে ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ চালুর ভাবনা মাথায় আসে তার। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঁচশর বেশি মিল্ক ব্যাংকের খোঁজ পান তিনি। এর মধ্যে মুসলিম দেশ- কুয়েত, মালয়েশিয়া, ইরাক, ইরান ও পাকিস্তানও রয়েছে।
আমি মনে করি, নবজাতকের মৃত্যুর হার কমাতে ও শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করতে হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকের প্রয়োজন রয়েছে। এই উদ্যোগটি যদি আলোর মুখ দেখে তবে আমাদের দেশের অনেক শিশু বুকের দুধ পান থেকে বঞ্চিত হবে না।
ধর্মীয় বিতর্কের সমাধান আমাদের খুঁজতেই হবে। প্রয়োজনে প্রতিটা দুগ্ধ প্যাকেটে মায়ের পরিচয় লেখা থাকুক। তিনি ছেলে শিশুর মা নাকি মেয়ে শিশুর মা তাও লেখা থাকুক। আরও কোনো সমস্যা থাকলে তারও সমাধান তৈরি হোক। তবুও বাংলাদেশে হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল এটি বাস্তবায়ন হোক। আমি চাই না, আমাদের দেশের একটি শিশু মায়ের দুধের অভাবে অপুষ্টিতে থাকুক।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৫। জেলা: বাগেরহাট।