পাঠ্য বইয়ে সুন্দরবনের বর্ণনা পড়েই শিহরণ জাগত। তখন থেকেই ইচ্ছে ছিল একবার অন্তত এই ম্যানগ্রোভ বনভূমিতে বেড়াতে যাব।
Published : 08 Jan 2017, 06:59 PM
মনে হতো, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত আর সুন্দরবনের মতো বড় সম্পদ কোনো দেশে নাই। বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের, জীবনে অন্তত একবার এই সমুদ্র সৈকত আর সুন্দরবন ভ্রমণ করা কর্তব্য।
তাই সুযোগ পেয়েই এবারের শীতের বন্ধে ঘুরে এলাম আশ্চর্য এ বন। আমরা ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় দুশ’ জনের দল সুন্দরবনের দিকে যাত্রা করলাম। সেদিন রাতেই পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে। পুরো তিনদিন লঞ্চে থাকার অভিজ্ঞতা এই প্রথম। কিন্তু ক্লান্তি লাগেনি মোটেই। কেননা ঘোরার সাথে ইনডোর ইভেন্টের আয়োজন ছিল।
প্রথমেই বলি এটি কেন ম্যানগ্রোভ। যে সব গাছ লোনা পানিতে জন্মায়, তাই ম্যানগ্রোভ গাছ। আর এ ধরনের গাছে সুন্দরবন ভরপুর। এ ধরণের গাছের মূল বৈশিষ্ট্য এগুলোর শ্বাসমূল। এগুলোর গোড়া থেকে একটা ডালের মতো চিকন অংশ মাটি ভেদ করে উঠে আসে। জোয়ারের সময় যখন মাটির উপরে পানি জমে যায় তখন এই শ্বাসমূলগুলো পানির উপরে ভেসে থাকে। এর মাথায় থাকে শ্বাসছিদ্র, যার সাহায্যে শ্বাস নেয় এসব গাছ। আর এই গাছগুলোর ফলের ভেতরেই বীজ থেকে চারা গজায়। এই বীজগুলো সূচালো হয়, ফলে গাছ থেকে পড়ার সাথে সাথেই মাটিতে গেঁথে যায়। এভাবে সুন্দরবন থাকে চিরসবুজ।
সুন্দরবনের ১০ হাজার কিলোমিটারের ছয় হাজার কিলোমিটারই বাংলাদেশের ভেতরে। নোনা পানিতে টিকে থাকতে পারে এমন গাছ সুন্দরী, গোলপাতা, গেওয়া, গরান, কেওড়া প্রভৃতি। আর সুন্দরবনের প্রাণীরাই এই ভূমির প্রাচুর্য। এখানে রয়েছে, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, বানর, কুমির, কচ্ছপ, শুশুক, ঘড়িয়াল, বন্য শূকর, বনবিড়াল, শেয়াল, বিচিত্র সব পাখি। আরও কত কী!
আমরা নেমেছিলাম সুন্দরবনের করমজল বন্য প্রাণী ও কুমির প্রজনন কেন্দ্রে, যেখানে হরিণ আর কুমিরের সাথে আছে অগণিত বানর। আর গাছগাছালির কথা বলার অপেক্ষাই রাখে না। এরপর অভয়ারণ্য হিরণ পয়েন্ট দেখলাম। এর চারদিকে পানিঘেরা। সেখানে আছে হরিণের দল।
কটকাতে ৪০ ফুট উঁচু একটি ওয়াচ টাওয়ার আছে যেখান থেকে বনের আশপাশ বেশ ভালোই দেখা যায়। আছে সমুদ্র সৈকত। কটকা থেকে কচিখালী প্রচুর ঘাস জন্মে বলে এটিকে বাঘের জায়গা বলে কিন্তু বাঘের সাথে দেখা এ যাত্রায় হয়নি। আর টাইগার পয়েন্টের নামেই বোঝা যায় এখানে চলে বাঘের আনাগোনা।
দেখা হলো বিদেশি ট্যুরিস্টের সাথেও। সুইডিশ এক মেয়ে জ্যানেট তার প্রবাসী বাঙালি বন্ধুর সাথে ঘুরতে এসেছিলেন। আলাপ করে বেশ ভালো লেগেছে।
বেড়িয়ে এসে মনে হলো, দল বেঁধে ছুটিতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য দারুণ এক জায়গা এই সুন্দরবন। আর অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় হলে তো কথাই নেই!