(দ্বিতীয় পর্ব) না, সে যাত্রা সেখানেই শেষ হয়নি। শোভনের ফোনে ইউসুফ ভাইয়ের ফোন এলো। তিনি আমাদের একটা নির্দিষ্ট বগিতে আসতে বললেন, আর আমরা গিয়ে দেখলাম-তিনি আমাদের জন্য আগে থেকেই তিনটি আসন রেখে দিয়েছেন।
Published : 07 Jan 2017, 05:49 PM
দেখে বেশ অবাকই হলাম। তখন মনে পড়ল আমার ওই বন্ধুর কথা। শোভনের কথাই ঠিক। পৃথিবীর সব মানুষ খারাপ না, বেশিরভাগ মানুষই ভালো। শুধুমাত্র কিছু খারাপ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়ে বা কিছু খারাপ অভিজ্ঞতার কথা শুনে আমরা মানুষকে বিশ্বাস করা বন্ধ করে দিই। যাইহোক কোন স্বার্থ ছাড়াই ইউসুফ ভাই আমাদের জন্য সিট রেখেছেন।
তারপর তিনি আমাদের সুন্দর একটা প্ল্যান করে দিলেন। আমরা কোথায় কোথায় যাব, কী খাব, কোন হোটেলটা ভালো হবে, আমরা কীভাবে ফিরতে পারি, সবকিছু।
এত কথা বলতে বলতে অনেক সময় কেটে গেল। এই ফাঁকে আমরা একটু কমলাপুর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে হাঁটলাম, সেলফি তুললাম, কফি খেলাম, টুকটাক জিনিসপত্র, পানি কিনে নিলাম।
ট্রেন ছাড়ল ১০.৩০ মিনিটে। এটা ছিল আমাদের প্রথম লোকাল ট্রেনে ভ্রমণ। তাই পুরো অভিজ্ঞতাটাই অন্যরকম ছিল। আমাদের সিটের আশেপাশেই দেখলাম অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। ঢাকা পার হতে হতে বেশ কয়েকটা স্টেশনে থামল ট্রেনটা। এক সময় ট্রেন একেবারে লোকে লোকারণ্য হয়ে গেল।
রাত গভীর হতে লাগল। আমারা তিন বন্ধু গল্প শুরু করলাম। কিছুক্ষণ গল্প, কিছুক্ষণ হেডফোনে গান শোনা বা টুকটাক গল্পের বইয়ে চোখ রেখে সময় কাটছিল। ট্রেন থেকে রাত দেখছিলাম। কী অদ্ভুত সৌন্দর্য চারপাশে। পানিতে আলো পড়ছে আর পানির ঢেউয়ের সাথে সাথে আলো নেচে চলেছে।
ধীরে ধীরে ভোর নেমে এলো। ভোরের অপরূপ সৌন্দর্য লিখে প্রকাশ করা যাবে না। ঘুম ঘুম চোখে মনে হচ্ছিল এক জীবন শুধু এই ভোর দেখে কাটিয়ে দিলে মন্দ হয় না!
আমরা যখন ট্রেন থেকে সীতাকুণ্ড স্টেশনে নামলাম তখন ঘড়িতে ৭ টা। আমরা নির্ধারিত হোটেল উঠলাম। বাবা মাকে ফোন করে জানালাম আমরা ভালোভাবে পৌঁছেছি।
তারপর হোটেল থেকে নেমে স্থানীয় একটা খাবার হোটেলে নাস্তা সেরে নিলাম। এখানকার খাবার ভালোই লাগল। তবে রান্নায় খুব বেশি তেল।
তারপর হোটেলে ফিরে একটু বিশ্রাম নিলাম। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি জানতে পারিনি। উঠে দেখি ১২টা বেজে গেছে। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের দিকে রওনা দিলাম। হোটেল থেকে একটা অটো নিয়ে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের কাছে পৌঁছাতে বেশি সময় লাগল না।
পাহাড়ের কাছে পৌঁছে বেশ অবাকই হলাম। পাহাড়টা আমাদের ভাবনার চেয়ে উঁচু। একবার মনে হলো দরকার নেই থাক। আবার ভাবলাম মা বাবাকে মানিয়ে এত কষ্ট করে এতদূর এসে ফিরে যাব?