কদিন আগে চন্দ্রিমা উদ্যানে ঘুরতে গিয়েছিলাম। সেখানেই পরিচয় হল এক ফুল বিক্রেতা শিশুর সঙ্গে।
Published : 17 Feb 2016, 01:15 PM
ও খালি গায়ে ফুল বিক্রি করছে। নাম হাফসা। ওর বয়স মাত্র পাঁচ বছর। কাছে ডেকে পাঁচ টাকার ঝালমুড়ি কিনে দিয়ে গল্প শুরু করলাম।
মা আর দুই ভাইকে নিয়ে ওর সংসার। এক বোন আর দুই ভাই এর মধ্যে হাফসা দ্বিতীয়।
এক সময় তার বাবাও তাদের সঙ্গে ছিল। এখন বাবা জেলে। তবে কেন জেলে তা ও বলতে পারে না।
ও শ্যামলীর একটি বস্তিতে থাকে মায়ের সঙ্গে থাকে। সেখানেই কাটে তাদের দৈনিন্দন জীবন। দুই ভাইয়ের একজনের বয়স নয়, অন্য জনের তিন।
ও আর মা দুজন মিলে চন্দ্রিমায় ফুল বেঁচে যা পায় তা দিয়েই চারজনের সংসার চলে।
ও বলে প্রতিদিন খুব ভোরে মায়ের সঙ্গে শাহবাগ গিয়ে ফুল কিনে আনে। ফুল দিয়ে তার মা মালা বানায়। মা মেয়ে মিলে সারাদিন সে মালা বিক্রি করে।
তিন ভাই বোনের কেউই স্কুলে যায় না বলে জানায় ও। বড় ভাই ছোট ভাইকে দেখাশোনা করে। টাকা নেই বলে ও ফুল বিক্রি করে। স্কুলে যাওয়ার টাকা ও সময় কিছুই নেই, বলে হাফসা।
ও বলে, বাবা থাকলে স্কুলে যাইতাম। মা স্কুলে যাইতে দেয় না।
হাফসা বলে, ওর টেলিভিশন দেখতে ভালো লাগে। ওদের বস্তির ঘরে আগে টেলিভিশন ছিল। বাবা জেলে যাওয়ার পর কেউ একজন এসে ওদের টিভি জোর করে নিয়ে গেছে। আগে ও টিভিতে ডোরেমনের কার্টুন দেখত।
ও বড় হয়ে পোশাক কারখানায় কাজ করতে চায়। অনেক টাকা আয় করবে। আর ভাই রিকশা চালাবে।
ওর ইচ্ছার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমাদের কাউকে জিজ্ঞেস করলে অনায়াসে বলে দেই চিকিৎসক হবো, ইঞ্জিনিয়ার হবো। অথচ ও বলে গার্মেন্টসে কাজ করবে। আসলে চিকিৎসক বা ইঞ্জিয়ার যে একটা পেশা এটা তো ওর বোঝার কথা না।
এভাবেই হাজার শিশু অন্ধকারে থেকে যায়। খোঁজ নেয় না কেউই।