মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মিরতিংগা চা বাগান থেকে ভালো থাকার বিশ্বাস নিয়ে প্রীতি এসে উঠেছিল ঢাকার মোহম্মদপুরের ওই সাংবাদিকের বাসায়।
Published : 13 Mar 2024, 11:52 AM
মায়ের আদর, স্কুল, খেলা, বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো কিংবা মান অভিমান সব কিছু পেছনে ফেলে নিজের জন্য দুমুঠো ভাত আর পরিবারের জন্য আর্থিক স্চ্ছলতা কিনতে মৌলভীবাজার থেকে ঢাকায় এসেছিল প্রীতি নামের এক শিশু।
তার পরের কাহিনী তো আমাদের সবারই জানা। অন্যের বাড়িতে কাজ করতে এসে লাশ হয়ে ফিরতে হয় প্রীতি উড়াং নামের চা বাগানের শ্যামলিমায় বেড়ে ওঠা ওই শিশুকে।
প্রীতি কি নিজের ইচ্ছায় কাজ করতে এসেছিল ঢাকায়? নাকি অনিচ্ছায়। জানা নেই আমার। তবে সে যে এই চার দেয়ালের বন্দি জীবন থেকে মুক্তি খুঁজেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। মুক্তি মিলেছেও তার। যে বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করত প্রীতি সে ‘বাড়ির নয় তলা থেকে পড়ে’ মারা গেছে সে।
প্রীতি উরাং দরিদ্র চা শ্রমিকের মেয়ে। চা বাগানের সব শ্রমিকরাই দরিদ্র। তার উপর প্রীতির বাবা-মা হলেন মিরতিংগা চা বাগানের অস্থায়ী শ্রমিক। তারা ছিলেন হতদরিদ্র। রোগ, শোক, দুঃখ, ক্ষুধা তো ছিল তার গা-সওয়া। তাই হয়ত একটু ভালো থাকার আশায় পাড়ি জমিয়েছিল এই ঢাকায়।
কিন্তু প্রীতির বাবা লোকেশ উরাং এর স্বপ্ন ছিল ঢাকায় কাজ করে প্রীতি যে টাকা পাবে তাতে করে মেয়ের বিয়ে দেবেন। শত কষ্টের মধ্যে বুকের মানিককে কাজে দিয়েছিলেন এই উদ্দেশ্যেই।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তিনি মেয়েকে কাজে দিয়েছিলেন যাতে ‘বড় হলে বিয়েটা অর্থাভাবে আটকে না যায়।’ কিন্তু বড় হওয়া বা অর্থ কষ্ট দূর না হওয়া কোনটাই হলো না প্রীতির। সৈয়দ আশফাক নামের এক সাংবাদিকের বাসায় মৃত্যু হলো তার।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ’। কিন্তু প্রীতির জন্য বিশ্বাস না হারানোটাই পাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি মিন্টু দেশোয়ারার মাধ্যমে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মিরতিংগা চা বাগান থেকে ভালো থাকার বিশ্বাস নিয়ে প্রীতি এসে উঠেছিল ঢাকার মোহম্মদপুরের ওই সাংবাদিকের বাসায়।
প্রীতির বাবা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদককে বলেন, “মিন্টু গার্জিয়ান হইয়া মেয়েটাক দিছিল। ২০২২ সালে। আরেকটা আমার জ্যাঠালির (স্ত্রীর বড় বোন) মেয়ে ছিল ওইখানে। তাই বিশ্বাস করিয়াই তাকে দিলাম।” এই বিশ্বাসই তবে কাল হলো।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী সারাদেশে এখন ২৫ লাখ গৃহকর্মী আছেন। তাদের মধ্যে বড় একটি অংশ নারী। জাতীয় শিশু শ্রম জরিপ অনুযায়ী, দেশে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে এমন শিশুর সংখ্যা এক লাখ ২৫ হাজার, যাদের বয়স পাঁচ থেকে ১৭ বছর। আর এর মধ্যে শতকরা ৮০% মেয়ে শিশু। প্রীতিও এই পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের দলের।
প্রীতির মৃত্যু রহস্য উদঘাটনের তদন্ত চলছে। হয়তো বেরিয়ে আসবে এর পেছনে কারা ছিলেন। কিন্তু প্রীতির মা বাবা কি ফিরে পাবেন তাদের হারানো কন্যাকে? প্রতিটি হত্যারই সুষ্ঠ বিচার দরকার।
সেই সঙ্গে আর কোনো শিশুকে যেন কাজে আসতে না হয়, অকালে মারা যেতে না হয়, তার জন্য সব ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া খুবই জরুরী আজ।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৫। জেলা: ঢাকা।