বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গবেষকরা লকডাউনের আগে এবং পরে সমুদ্রের নিচের শব্দ শোনার পরিকল্পনা করেন। দুই শত ওশেন হাইড্রোফোন থেকে তারা শব্দ শনাক্ত করেছেন। হাইড্রোফোন হলো এক ধরণের মাইক্রোফোন যা সমুদ্রের নিচের শব্দ শোনার কজে ব্যবহৃত হয়।
ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট অ্যান্ড্রুসের অধ্যাপক পিটার ট্যাক এ নিয়ে বলেন, "লকডাউন বৈশ্বিক মালামাল স্থানান্থরকে মন্থর করে দিয়েছে। না হলে এটি সম্ভব হতো না।
"আমাদের পরিকল্পনা ছিল হাইড্রোফোন ব্যবহার করে শব্দের পরিবর্তন পরিমাপ করা এবং কিভাবে তা জলজ জীবনকে প্রভাবিত করা তা জানা। ট্রাফিকের আওয়াজ ও ব্যস্ততা কমে যাওয়ার কারণে মানুষ যেমন আরো বেশি পাখির কিচিরমিচির শুনতে পাচ্ছে বা পরিবেশে আরো বেশি বন্যপ্রাণী দেখতে পাচ্ছে ব্যাপারটা তেমনই।"
পরিবেশের দূষণ ও জলবায়ুর পরিবর্তন সমুদ্রের ওপর ব্যাপক প্রভাব রাখছে। উচ্চ শব্দের প্রভাবও সেটিরই অংশ। কিন্তু শব্দ কমিয়ে আনা তুলনামূলক সহজ বলে মনে করেন অধ্যাপক ট্যাক।
ইউনিভার্সিটি অব নিউ হ্যাম্পশায়ারের অধ্যাপক ও সমুদ্রের ধ্বনি বিশেষজ্ঞ জেনিফার মাইকসিস-ওল্ডস মনে করেন এ গবেষণা সমুদ্রের নিচের শব্দ দূষণের তথ্যের পাশাপাশি আরো অনেক সূক্ষ্ম ব্যাপার তুলে ধরবে।
তিনি বলেন, "আমরা সমুদ্রের শব্দ থেকে অনেক কিছু জানতে পারি। আমার লক্ষ্য হলো বৈশ্বিক ওশেন সাউন্ডস্কেপের একটা মানচিত্র তৈরি করা যেখান থেকে জাহাজের রুটের শব্দ শুনতে পাওয়া যাবে, তিমির এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার প্যাটার্ন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। এমনকি বড় বরফ ভাগ হয়ে ছোট বরফখণ্ড হওয়ার শব্দ থেকে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কেও জানা যাবে।"
'সাইন্স' জার্নালে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ বলছে বিগত বছরগুলোর জাহাজ নির্মাণকাজ, সামরিক কার্যক্রম এবং তেল-গ্যাসের ব্যবহারের জন্য সমুদ্রের নিচে শব্দ বাড়ছে যা জলজ জীবনকে প্রভাবিত করছে।
সামুদ্রিক প্রাকৃতিক শব্দ জলজ প্রাণীদের নানা সহায়তা করে থাকে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ট্যাক। এর ভূমিকা বোঝাত এগিয়ে তিনি বলেন, মাছের লার্ভা কোথায় গিয়ে বাস করতে হবে তা ঠিক হয় প্রবাল প্রাচীরের শব্দ থেকে। তাই সমুদ্রের নিচে শব্দ কমানোর দিকে সবার নজর দেওয়া উচিত বলে তার মত।