অ্যাবাভান ট্র্যাজেডি, যা কেড়ে নিয়েছিল শতাধিক শিশুর প্রাণ

যুক্তরাজ্যের সাউথ ওয়েলসের টিডফিল শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি গ্রাম অ্যাবাভান।  চারদিকে পাহাড়ে ঘেরা এই গ্রামটির অধিবাসীদের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম বড় উৎস ছিল কয়লা উত্তোলন। গ্রামের অধিকাংশ অধিবাসী ছিল কয়লা খনির শ্রমিক।
অ্যাবাভান ট্র্যাজেডি, যা কেড়ে নিয়েছিল শতাধিক শিশুর প্রাণ

বলছি ২১ অক্টোবর, ১৯৬৬ সালের কথা। কয়লা খনির শ্রমিকদের সামান্য একটি ভুলের জন্য কয়লার নিচে হারিয়ে গিয়েছিল ১৪৪টি তাজা প্রাণ, যার মধ্যে ১১৬ জন ছিল শিশু।

লম্বা লম্বা পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত অ্যাবাভান গ্রামটি। কয়লা উত্তোলনের সময় কয়লা শ্রমিকেরা বর্জ্য ও অবশেষ পাহাড়ের ওপর ঢিপি করে রাখতো।

কয়লা খনির সাত নম্বর ঢিপিটা ছিল অ্যাবাভান গ্রামের ঠিক ওপরে। খুব কাছেই ছিল প্যান্টগ্লাস জুনিয়র স্কুল। ওই ঢিপির নিচ দিয়ে বেশ কয়েকটি নদী প্রবাহিত হয়েছিল।

অক্টোবর মাসে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছিল অ্যাবাভানে। একদিকে বৃষ্টিপাত, অন্যদিকে ভূগর্ভস্থ নদী ও কয়লার বর্জ্যের ভারে পাহাড়টি ধসে পড়ে। ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল সোয়া নয়টা।

প্রায় দেড় লাখ টন কয়লা, তরল বর্জ্য, পাহাড়ের ধ্বংসাবশেষের স্রোত আছড়ে পড়ে অ্যাবাভান গ্রামের ওপর। প্রথমেই আঘাত হানে প্যান্টগ্লাস জুনিয়র স্কুলে, যেখানে শিক্ষার্থী-শিক্ষক মিলে মোট ২৪০ জন ছিল।

কেউ বুঝে ওঠার আগেই প্যান্টগ্লাস জুনিয়র স্কুল ও স্কুল সংলগ্ন এলাকা পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে। কালো কয়লায় ও কয়লার তরল বর্জ্যে ঢেকে যায় স্কুল, বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট। এক কালো অন্ধকার দিনের সাক্ষী হয় অ্যাবাভানবাসী।

কয়লা খনির শ্রমিক, অগ্নিনির্বাপণকর্মী ও সাধারণ মানুষ, সকলে উদ্ধারকাজে হাত লাগায়। একে একে বের হয়ে আসতে থাকে লাশ, ছোট্ট শিশুদের নিথর দেহ। প্যান্টগ্লাস জুনিয়র স্কুলের অধিকাংশ শিশুর বয়স ছিল ১০ বছরের নিচে।

গোটা বিশ্ব থেকে অ্যাবাভানবাসীর আর্থিক সহায়তার জন্য ১.৭৫ মিলিয়ন পাউন্ডের তহবিল গঠন করা হয়।

দুর্ঘটনার বছর তিনেক আগে স্থানীয় কয়েকজন প্রকৌশলী ঝুঁকিপূর্ণ সাত নম্বর ঢিপিটা ধসে পড়ার আশঙ্কা করে কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লেখেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

প্রতি বছর ২১ অক্টোবর দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে অ্যাভাবানবাসী এই অন্ধকার দিনের কথা স্মরণ করে। এদিনে তারা তাদের জাতীয় পতাকা অর্ধনিমিত রাখে।

আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।  অসাবধানতা আর অলসতার জন্য অ্যাবাভানবাসী হারিয়েছিল তাদের নতুন প্রজন্মকে।

পরবর্তীতে অ্যাবাভানে কয়লা উত্তোলন ও পাহাড়ের ওপর কয়লা রাখার ব্যাপারে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com