কমে যাচ্ছে তিমির সংখ্যা

সম্প্রতি ইতালির সারডিনিয়ার পর্ত সার্ভতে প্লাস্টিক দুষণের ফলে প্রাণ হারানো এক স্ত্রী স্পার্ম তিমির মৃত দেহ ভেসে উঠেছে। মৃত তিমির পেটে পাওয়া গিয়েছে আটচল্লিশ পাউন্ডের বেশি প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্য।
কমে যাচ্ছে তিমির সংখ্যা

মৃত স্ত্রী তিমিটির পেটে আরো পাওয়া যায় একটি অপরিণত ভ্রূণের চিন্হও। তবে, মা তিমির মৃত্যুর ফলে প্রাণ হারায় অপরিণত ভ্রুণও।

প্লাস্টিক বর্জ্যের সাথে মিশ্রিত হয়ে পচন ধরায় ভ্রুনের উপস্হিতি বুঝতেও প্রয়োজন হয় বাড়তি সময়।

তিমিটির মৃতদেহটি ৪ এপ্রিল মঙ্গলবার 'সিমি সারদিনিয়া' নামক একটি অলাভজনক সংগঠন উদ্ধার করে এবং তা নিয়ে তদন্ত করে।

তিমিটির মৃত্যুর কারণ এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে পরবর্তীতে ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ড এই তথ্য প্রকাশ করে যে, ২৬ ফুটের এই তিমিটির পেটে পাওয়া প্লাস্টিকের পরিমাণ তার আকার অনুপাতে অস্বাভাবিক। এছাড়াও আগের মাসে ফিলিপাইনস এ আরেকটি তিমির মরদেহ উদ্ধার করার পর তদন্ত করে ৮৮ পাউন্ড প্লাস্টিক বর্জ্য পাওয়া যায়। ১৫ ফুটের এই তিমির জন্য এ পরিমাণ প্লাস্টিক ঠিক একইভাবে অস্বাভাবিক ছিল।

দাভাও শহরের ডি'বোন কালেক্টর জাদুঘরের ড্যারেল ব্লাটচলি এই তিমির ময়না তদন্ত করে জানান, এমন প্লাস্টিকের পরিমাণ তিনি পূর্বে কোনো প্রাণীর ভেতরে দেখেননি। প্লাস্টিকের পরিমাণ এতই বেশি ছিল যে তা দৃঢ় হয়ে ইটের মতো আঁটসাট হয়ে ছিল। প্লাস্টিক এত সময় ধরে এই তিমির ভেতরে প্রবেশ করেছে যে তা জমাট বাঁধতে শুরু করে।

ঠিক একইভাবে নভেম্বর মাসে ইন্দোনেশিয়া ৪০ কেজি এবং আগের বছর স্পেনে ৬০ পাউন্ড প্লাস্টিকসহ স্পার্ম তিমির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল।

খাবারের বদলে প্লাস্টিক খেয়ে ফেলার পর তা হজম না হওয়ায় তিমির পেট সব সময় ভরা থাকে। এতে তিমির দেহে ভুল সংকেত পৌঁছায়, পেট ভরে থাকার অনুভূতির সৃষ্টি হয়।

ফলাফল স্বরূপ ওজন হ্রাস, দুর্বলতা, ধীর গতি এবং প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবেলার ক্ষমতা কমে যায় এর।

সামুদ্রিক তিমিসহ সকল প্রাণীর জন্য প্লাস্টিক অত্যন্ত ক্ষতিকর। কিন্তু এরপরও কমেনি প্লাস্টিক ব্যবহারের মাত্রা।

জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণামতে চীন, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনস, ভিয়েতনাম সমুদ্রে প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা দেশগুলোর তালিকায় প্রথম দিকে অবস্থান করছে। উক্ত তালিকায় বাংলাদেশও দখল করে নিয়েছে দশম স্থান।

এ বিষয়ে ইতালির পরিবেশ মন্ত্রী সার্জিও কোস্তা প্রতিশ্রুতি দেন যে সকল প্রকার অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকারক প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্যে নিষেধাজ্ঞা জারি এবং তার প্রতিস্থাপক উপাদান প্রস্তুত করা হবে। কেননা, এধরণের জীবনযাত্রা কেবল মাত্র সামুদ্রিক নয়, সকল প্রকার পরিবেশ দুষিত করে। কেবল ইতালি নয়, সারাবিশ্বের এগিয়ে আসতে হবে এই সমস্যার প্রতিকারে।

তিনি বলেন, "এখনো কি কেউ আছে যে এই বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা বলে বিচার করেন না?"

এ বিষয়ে ড্যারেল ব্লাটচলি বলেন, "সকল প্রকার আলোচনা হলেও, শেষ পর্যন্ত কোনো প্রকার কার্যকরী ধাপ নিতে কোনো দেশকেই এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে না।"

তিনি হতাশার সাথে তার অনলাইন পেইজে লিখেছেন, “সবাই ভান করে সমস্যা আমাদের নয়, অন্য কারো।"

একদিকে গবেষকদের হতাশা, অন্যদিকে বেড়ে চলছে প্লাস্টিক বর্জ্য এবং প্রতিশ্রুতির সংখ্যা। অন্যান্য বিলুপ্ত প্রাণীদের তালিকায় স্পার্ম তিমির নাম উঠবার আগেই কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গৃহীত হবে কিনা তা এখন সকলের প্রশ্ন!

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com