'ভাষা' শিখতে সঙ্গীত ভালো

সঙ্গীত শুধু শিশুদের তাল ও সুরের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় তাই নয়, এটা উল্লেখযোগ্যভাবে তাদের ভাষাদক্ষতারও উন্নতি করতে পারে বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
'ভাষা' শিখতে সঙ্গীত ভালো

ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের গবেষণার রিপোর্ট থেকে পাওয়া গেছে, বাদ্যযন্ত্র শেখার প্রভাব ভাষা দক্ষতাকে প্রভাবিত করতে পারে। এটি বোঝা যায় না এটি জ্ঞানের দক্ষতার একটি সাধারণ বিকাশের অংশ কি না, বা এমন কিছু যা সরাসরি ভাষা প্রক্রিয়াকরণকে প্রভাবিত করে।  

এমআইটির স্নায়ুবিজ্ঞানী রবার্ট ডেসিমনের নেতৃত্বে ৭৪ টি চীনা কিন্ডারগার্টেন শিশুদের নিয়ে একটি গবেষণার মাধ্যমে এটি সিদ্ধান্তের কাছাকাছি এসে গিয়েছে।

ডেসিমন জানান, শিশুদের অন্যান্য আচরণের মধ্যে পার্থক্য ছিল না, তবে বৈষম্যমূলক শব্দে, বিশেষ করে ব্যঞ্জনবর্ণে তারা উন্নতি দেখিয়েছে।

পিয়ানো শিক্ষার্থীরা সেখানে সেরা উন্নতি দেখিয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।  

অনুশীলনের জন্য ডেসিমনের দলসহ এমআইটির বিজ্ঞানী এবং বেইজিং সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা শিশুদের উপর গবেষণায় দেখতে চেয়েছিলেন কীভাবে সংগীতশিক্ষা তাদের একাডেমিক রেজাল্টে সাহায্য করতে পারে।

চার থেকে পাঁচ বছর বয়সী মান্দারিন ভাষাভাষী অধ্যয়নরত শিশুদের এলোমেলোভাবে তিনটি দলে ভাগ করা হলো। এদের মধ্যে সপ্তাহে তিনবার এক গ্রুপ ৪৫ মিনিটের পিয়ানো বাজানো ক্লাস পেয়েছে, অন্যরা পড়াশোনার অতিরিক্ত ক্লাস পেয়েছে। তৃতীয় গ্রুপ নিয়ন্ত্রিত রাখা হয়েছে, তাদের স্বাভাবিক রুটিনের বাইরে অতিরিক্ত শিক্ষা দেওয়া হয়নি।  

এটি ছয়মাস ধরে চলার পর শিশুদের স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ স্বরের ভিত্তিতে চেনার ক্ষমতা যাচাই করা হয়। ম্যান্দারিন ভাষায়, অনেক শব্দ তাদের স্বরের নির্ভর করে। স্বরের ভিন্নতা স্বর শব্দগুলির ওর্থের ভিন্নতা তৈরি করে।  

পরীক্ষার ফলাফলে পাওয়া যায় যেসব শিশুরা পিয়ানো বাজানোর ক্লাসগুলি পেয়েছে তাদের স্বর চেনার ক্ষমতা, যারা অনেক বেশি পড়াশোনা করেছে তাদের থেকে বেশি।  

কেন এই পার্থক্য ঘটতে পারে তা বোঝার জন্য গবেষকরা ইলেক্ট্রো এনসেফ্যালোগ্রাফির (ইইজি) মাধ্যমে শিশুদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপকে পর্যবেক্ষণ করে এই তথ্য পেয়েছেন যে, যে গ্রুপ পিয়ানো বাজানো শিখেছে তারা পিয়ানোর বিভিন্ন মাত্রার টোন বাজানোর সময় স্বরের পরিবর্তনের সাথে সংবেদনশীল থাকে।

ভাবা হয়, সঙ্গীত পাঠের প্রভাবে এই সংবেদনশীলতা তাদের মৌখিক শব্দভেদ বিকাশে সাহায্য করে।

এটি শিশুদের ভাষা শিক্ষার জন্য একটি বড় বিষয় যা দ্বারা তারা শব্দের পার্থক্য শুনে বুঝতে সক্ষম হচ্ছে আর এর থেকে তারা আসলেই উপকৃত হয়েছিল, জানান ডেসিমন।    

তিনটি গ্রুপের মধ্যে আইকিউ, মনোযোগ এবং কাজের স্মৃতিশক্তি ধারণের ফলাফলে কোনো উল্লেখযোগ্য পার্থক্য পাওয়া যায় না। এ কারণে পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে, সংগীত জ্ঞান বাড়াতে সাহায্য করে না তবে স্বরভিত্তিক ভাষাশিক্ষার ক্ষেত্রে এটি ফলদায়ক।      

সাইন্স অ্যালার্ট এর বরাত দিয়ে গবেষকদল বলেন, অবশ্যই যে শিশুদের নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে, সবার পটভূমি ছিলোমান্দারিন ভাষা। এই মান্দারিন ভাষার স্বর নির্ভরতায় ফলাফল প্রভাবিত হতে পারে বলে গবেষকরা স্বীকার করেন। 

কিন্তু এটাও জোর দিয়ে বলেন, বাদ্যযন্ত্র শিক্ষার ফলে এইসব ছেলেমেয়েরা ভাষা পরীক্ষায় অতিরিক্ত ক্লাস গ্রহণকারী বাচ্চাদের চেয়ে এগিয়ে থাকবে, যা দ্বারা শিক্ষকদের মনোযোগ আকর্ষিত হবে।  

ডেসিমনি বলেন, কথা বলার ধ্বনির মত এটি অনেক রকম ধ্বনি চেনার ক্ষেত্রে ফলদায়ক, যা বেশি পড়াশোনা করার থেকে ভালো। এটার মানে স্কুলগুলো সংগীত শিক্ষায় তাদের বিনিয়োগ করতে পরে। এটি শব্দ চেনার ক্ষেত্রে কাজে লাগবে।  

স্কুলগুলিতে বাচ্চাদের অতিরিক্ত পড়া দেবার মত প্রহসন থেকে বের করে আনতে পারবে, যেটি সাধারণত অনেক স্কুলেই করা হয়।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com