”গত দশকে বিশ্বব্যাপী দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে উদ্বাস্তু জনসংখ্যা, যার অর্ধেক সংখ্যকই শিশু।”
Published : 20 Jun 2022, 08:56 PM
সংঘাত, সহিংসতা এবং অন্যান্য সংকটের কারণে ২০২১ সালের শেষের দিকে তিন কোটি ৬৫ লক্ষ শিশু তাদের বসতবাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ।
হ্যালোকে পাঠানোকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি জানায়, ইউনিসেফের অনুমান এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সর্বোচ্চ সংখ্যা।
এর মধ্যে উদ্বাস্তু এবং আশ্রয়প্রার্থী শিশুর সংখ্যা এক কোটি ৩৭ লক্ষ। তাছাড়া প্রায় দুই কোটি ২৮ লক্ষ শিশু রয়েছে, যারা সংঘাত ও সহিংসতার কারণে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
বিশ্ব শরণার্থী দিবসে সকল দেশের সরকারকে উদ্বাস্তু, অভিবাসী ও বাস্তুচ্যুত শিশুদের সুরক্ষা এবং প্রয়োজনীয় সেবা প্রাপ্তির সুযোগ জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
ইউনিসেফ মনে করে, বাস্তুহারা শিশুদের এই সংখ্যা, আফগানিস্তানের মতো দেশ সমূহে তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতসহ, ক্রমবর্ধমান নানাবিধ সংকটের প্রত্যক্ষ ফল। এর সাথে যুক্ত হয়েছে জলবায়ুর প্রভাব। তাছাড়া ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো বা ইয়েমেনের মতো দেশগুলোর সার্বিক অবস্থাও এই সংখ্যাকে বাড়িয়ে দিয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
আফ্রিকার হর্ন এবং সাহেলের খরা এবং বাংলাদেশ, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকায় ভয়াবহ বন্যার মতো চরম আবহাওয়ার কারণেও শিশু এবং তাদের পরিবারগুলো ঘর বাড়ি হারাচ্ছে।
গত দশকে বিশ্বব্যাপী দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে উদ্বাস্তু জনসংখ্যা, যার অর্ধেক সংখ্যকই শিশু। এই বাস্তুচ্যুত শিশুদের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি সাব-সাহারান আফ্রিকায়, এক চতুর্থাংশ ইউরোপে এবং মধ্য এশিয়ায় এবং ১৩ শতাংশ রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে এবং উত্তর আফ্রিকায়।
বাস্তুচ্যুত এবং উদ্বাস্তু শিশুদের সংখ্যা রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছানোর ফলে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং সুরক্ষার মতো প্রয়োজনীয় সহায়তা এবং সেবা প্রাপ্তির হার কমছে। উদ্বাস্তু শিশুদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও শরণার্থী কিশোর-কিশোরীদের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যাচ্ছে বলে সংস্থাটি জানায়।
বিশ্বব্যাপি ছিন্নমূল, শরণার্থী, আশ্রয়প্রার্থী বা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত শিশুরা সুস্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তার ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ।
এই বিজ্ঞপ্তিতে ইউনিসেফ সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে গ্লোবাল কমপ্যাক্ট অন রিফিউজিস (জিসিআর) এবং গ্লোবাল কমপ্যাক্ট ফর মাইগ্রেশনের (জিসিএম) অধীনে দেয়া প্রতিশ্রুতিসহ সমস্ত উদ্বাস্তু শিশুদের অধিকারের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে। তাছাড়া তথ্য এবং গবেষণায় আরও বিনিয়োগ করারও আহ্বান জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি; যাতে উদ্বাস্তু, অভিবাসী এবং বাস্তুচ্যুত শিশুদের সমস্যাসমূহ উঠে আসে।
সকল শরণার্থী, অভিবাসী এবং বাস্তুচ্যুত শিশুদের সমান অধিকার এবং সুযোগ অর্জনের জন্য সদস্য সকল সরকারকে ছয়টি পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ।
এর মধ্যে স্থান, কাল, পাত্র ভেদাভেদ না করে সকল শিশুকে সমান সহায়তা প্রদান; শরণার্থী, অভিবাসী এবং বাস্তুচ্যুত শিশুদের সর্বাগ্রে স্বীকৃতি ও সুরক্ষা দেওয়া; স্থান, কাল, পাত্র নির্বিশেষে সমস্ত ছিন্নমূল শিশু এবং তাদের পরিবারের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাসহ প্রয়োজনীয় সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপ বৃদ্ধি করা; শরণার্থী, অভিবাসী এবং বাস্তুচ্যুত শিশুদের বৈষম্য ও জেনোফোবিয়া (বিদেশিদের প্রতি ভয়) দূর করা এবং শিশু অভিবাসন আটক বন্ধ করে উদ্বাস্তু, অভিবাসী এবং বাস্তুচ্যুতদের প্রতিভা বিকাশে সহায়তা করা।