ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

বিশ্ব রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস

জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল আহত ব্যক্তিকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে স্বেচ্ছাসেবা দিয়ে যাচ্ছে তারা।

রেডক্রস বা রেড ক্রিসেন্ট এমন একটি সংস্থা যারা যে কোনো দুর্যোগে দুর্ঘটনা কবলিত মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায়। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই ছড়িয়ে আছে এই সংস্থার কার্যক্রম।

৮ই মে রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস হিসেবে বিশ্বজুড়ে পালন করা হয়। রেড ক্রসের প্রতিষ্ঠাতা জিন হেনরি ডুনান্টের জন্মদিন স্মরণে এই দিনটিকে রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

অষ্টম শ্রেণির জন্য রচিত শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বইয়ে রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট প্রতিষ্ঠার ইতিহাস উল্লেখ রয়েছে।

বই থেকে জানা যায়, ১৮৫৯ সালের ২৪শে জুন ইতালির সালফেরিনো নামক স্থানে ফ্রান্স ও অস্ট্রিয়ার মধ্যে ১৬ ঘণ্টা ব্যাপী এক ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সেই যুদ্ধে হতাহত হয় প্রায় ৪০ হাজার সৈন্য। যাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার মতো কেউ ছিল না। তখন ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে সেই পথ ধরে ফ্রান্সে যাচ্ছিলেন সুইজারল্যান্ডের নাগরিক জিন হেনরি ডুনান্ট।

যুদ্ধক্ষেত্রে আহতদের ছটফট করতে দেখে তিনি খুবই ব্যাথিত হন এবং আশেপাশের গ্রামবাসীকে ডেকে এনে আহতদের প্রাথমিক সেবা দিয়ে জীবন রক্ষায় সাহায্য করেন। সে সময় প্রাথমিক চিকিৎসা দানকারী স্বেচ্ছাসেবকদের অধিকাংশই ছিলেন নারী।

জিন হেনরি ডুনান্ট যুদ্ধের এই ভয়াবহ স্মৃতি নিয়ে ১৮৬২ সালে ‘এ মেমোরি অব সালফেরিনো’ নামে একটি বই রচনা করেন। এই বইয়ে তিনি শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে এমন একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কথা বলেন যারা শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে আহতদের সেবা করবে।

১৮৬৩ সালে ডুনান্ট পাঁচ জন সদস্য নিয়ে গঠন করেন 'কমিটি অব ফাইভ'। পরবর্তী সময়ে এই সংস্থাটি নাম পরিবর্তন করে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস সোসাইটি নামে আত্মপ্রকাশ করে।

রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সাতটি মূলনীতি মেনে চলে। মূলনীতিগুলো হল মানবতা, পক্ষপাতহীনতা, নিরপেক্ষতা, স্বাধীনতা, স্বেচ্ছামূলক সেবা, একতা ও সার্বজনীনতা।

১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর রেডক্রস সোসাইটি বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশে সংস্থাটির নাম পরিবর্তিত হয়ে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি নামে পরিচিতি পায়।

১৮৬৩ সালে সর্বপ্রথম এই আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে রেডক্রস চিহ্ন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। দুর্যোগ বা যুদ্ধের মতো পরিস্থিতে রেডক্রসের সাহায্যকারী দলকে শনাক্ত করার জন্যই প্রতীক ব্যবহার করা হয়।

পরবর্তী সময়ে মুসলিম দেশগুলো ক্রস চিহ্ন ব্যবহারে আপত্তি জানালে রেড ক্রিসেন্ট চিহ্নের ব্যবহার শুরু হয়। বর্তমান সময়ে রেডক্রস এবং রেড ক্রিসেন্ট এই দুটি প্রতীকই বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল আহত ব্যক্তিকে স্বাধীনও নিরপেক্ষভাবে স্বেচ্ছাসেবা দিয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধবন্দী, যুদ্ধাহত, রুগ্ন ও আহত ব্যক্তির সেবা দান করার পাশাপাশি সংস্থাটি ব্লাড ব্যাংক রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে থাকে।

সংস্থাটি শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষদের প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কিত প্রশিক্ষণও প্রদান করে থাকে।

বাংলাদেশে যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা দুর্ঘটনায় রেড ক্রিসেন্টের সদস্যদের অগ্রগামী ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়।

প্রতিবেদকের বয়স: ১৫। জেলা: ঢাকা।

Related Stories

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com