বাঙালির আত্মত্যাগের এই দিনটি এখন কেবল আর বাংলার নয়, পুরো বিশ্বের।
Published : 21 Feb 2024, 08:16 AM
ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখ বাঙালি জাতির শেকড় আর সাহসের দিন।
আজ থেকে ৭২ বছর আগে মাতৃভাষার জন্য রাজপথে রক্ত দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন বাংলার অকুতোভয় সন্তানেরা।
সেই ঘটনা জানতে ফিরতে হবে ১৯৪৭ সালে। তখন ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে এবং জন্ম নেয় ভারত ও পাকিস্তান নামের দুটি দেশ। কিন্তু পাকিস্তান রাষ্ট্রটি আরো দুটি অঞ্চলে ভাগ হয়। একটি পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) ও পশ্চিম পাকিস্তান (বর্তমান পাকিস্তান)।
দেশ ভাগের পর পাকিস্তান, ভারত দু প্রান্তেই ভাষা নির্ধারণ করাটা জরুরি হয়ে পড়ে। তখন পূর্ব পাকিস্তানে শতকরা মাত্র সাত শতাংশ মানুষ কথা বলত উর্দু ভাষায়। আর বাংলায় কথা বলত ৫৪ শতাংশ। দ্বিগুণেরও বেশি ছিল উর্দু ও বাংলা ভাষাভাষীদের সংখ্যার তফাৎ। কিন্তু বাংলা ভাষাকে মুছে ফেলার পায়তারা করে পাকিস্তান সরকার।
ব্রিটিশ শাসন মুক্ত হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই ভাষা আন্দোলনের শুরু হয়। এই আন্দোলন থেমে থেমে নানাভাবে চলতে থাকলেও ১৯৫২ সালে তা বিদ্রোহে রুপ নেয়।
পরিস্থিতি বেসামাল দেখে আন্দোলন দমাতে ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ঢাকা শহরে মিছিলসহ সব ধরনের সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। গ্রেফতার করা হয় একের পর এক ছাত্র নেতাকে।
তবে শিক্ষার্থীরা সাহসের পরিচয় দেয়। তারা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন অর্থাৎ ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জমায়েত হতে থাকে তারা।
মিছিল নিয়ে রওনা হলে হঠাৎই লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষণ শুরু করে পুলিশ। রফিক, শফিক, জব্বার, বরকতসহ নাম না জানা আরও অনেকের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়ে যায়।
একুশে ফেব্রুয়ারির এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলন আরও বেগবান হয়। জনরোষের মুখে ১৯৫৬ সালে সংবিধানে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের একটি রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয় তারা।
বাঙালির আত্মত্যাগের এই দিন এখন কেবল আর বাংলার নয়, পুরো বিশ্বের। প্রতিটি মানুষের মায়ের ভাষার অধিকার রক্ষার দিন এটি।
বাঙালি জাতির ত্যাগকে স্বীকৃতি জানাতে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর থেকে বাংলাদেশের মহান শহীদ ও মাতৃভাষা দিবস পুরো বিশ্বের মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৪। জেলা: গাজীপুর।