তাজহাট জমিদার বাড়িতে একদিন (ভিডিওসহ)

রংপুর শহরেই আমার বাড়ি। কিন্তু কখনো তাজহাট জমিদার বাড়িতে যাওয়া হয় নাই। তাই ঠিক করলাম জমিদার বাড়ি ঘুরতে যাব।
তাজহাট জমিদার বাড়িতে একদিন (ভিডিওসহ)

তাই এক শুক্রবার সকালে প্রথম বারের মতো তাজহাট জমিদার বাড়ি দেখতে বের হলাম। পরিবারের সবার সাথে ঘুরতে যাওয়ার মজাটাই অন্যরকম।

রংপুর শহর থেকে তিন কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত তাজহাট জমিদার বাড়ি। আমরা গিয়ে পোঁছালাম সকাল ১১টায়।

তাজহাট নামটা শুনলে মনে হবে মুকুটের হাট বা বাজার। আসলেও এক সময় তাই ছিল। শোনা যায়, আটারো শতকের শেষের দিকে মান্নালাল রায় নামে এক ব্যক্তি পাঞ্জাব থেকে এসে রংপুরে বসবাস শুরু করেন। তিনি ছিলেন পেশায় স্বর্ণালংকার।

তিনি আকর্ষণীয় তাজ বা রত্ন খচিত স্বর্ণের মুকুট তৈরি করে এ এলাকায় বিক্রি করতেন বলে ওই এলাকার নামকরণ হয় তাজহাট। এটি রংপুর শহরের একটি আকষণীয় প্রত্নতাত্বিক স্থান যা রংপুর প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর ও তাজহাট জমিদার বাড়ি নামে পরিচিত।

মান্নালাল রায় তাজহাট জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতা। ধারণা করা হয় ওই বংশের রাজা গোপাল রায় বিশ শতকের শুরুর দিকে এই প্রাসাদ নির্মাণ করেন।

১৯৯৫ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ইমারতটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে। ২০০৫ সাল থেকে এই প্রসাদের অংশ বিশেষ রংপুর জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

পূর্বমুখী বিশাল এ প্রাসাদটির দৈর্ঘ্য ৭৬.২০ মিটার। এ প্রাসাদে মোট ২০টি কক্ষ আছে। ধারণা করা হয়, বিংশ শতকের শুরুর দিকে মহারাজা কুমার গোপাল লাল রায় এই প্রাসাদ নির্মাণ করেন।

জাদুঘরে রয়েছে অনেক পুরাকীর্তি ও দুর্লভ জিনিসপত্র। রয়েছে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের একটি কর্নার যেখানে তার নিজের হাতের লেখা চিঠিপত্রও দেখা যায়। এছাড়াও রয়েছে রামায়ন, মহাভারত ও কোরআনের হস্তলিখিত পান্ডুলিপি।

হাতির দাঁত, পোড়ামাটির ফলক, পাথরে খোদাইকৃত বিভিন্ন শিলালিপিসহ অসংখ্য পুরাকীতি রয়েছে এ জাদুঘরে।

রংপুর প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর ও তাজহাট জমিদার বাড়ির কাস্টোডিয়ান হাবিবুর রহমান বলেন, তাজহাটের জাদুঘরের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও এর আকর্ষণীয় চত্বর দেখতে প্রতিদিন শিশুসহ এক হাজারের উপরে দর্শনার্থী আসেন। শিশুদের জন্য তাজহাট জমিদার বাড়ি অত্যন্ত পছন্দের জায়গা।

১৬ একর জমির উপর জমিদার বাড়িটির চারিদিকে রয়েছে সুশোভিত ফুল ও পাতাবাহারের গাছসহ অসংখ্য বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। এর প্রধান আকর্ষণ হলো পাতাবাহারের জীবন্ত গাছ দিয়ে তৈরি শহীদ মিনার, নৌকা, বেড, ও হৃদয়ের আকৃতি। জমিদার বাড়িতে রয়েছে শাপলা আচ্ছাদিত তিনটি পুকুর যা এই প্রত্নতাত্বিক স্থানকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

পরিবারের সাথে তাজহাট ভ্রমণ ছিল আমার অন্যসব ভ্রমণ জায়গার থেকে একটু ব্যতিক্রম। এখানে এসে এখানকার ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পেরে আমার খুব ভালো লেগেছে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com