করতোয়া নদীর তীর ঘেঁষে উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার অদূরে ২.৭৮ একর জমিতে ৩৫ ফুট দীর্ঘ এবং ১৮ ফুট প্রস্থের এ মন্দিরটি ইংরেজ আমলে কোচবিহারের এক মহারাজা মন্দিরটি নির্মাণ করেন।
বোদেশ্বরী মন্দির কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক শ্রী হরিদাস চন্দ্র রায় ( ৫৪) এর দেওয়া তথ্য মতে, হিন্দু ধর্মের ১৮টি পুরাণের মধ্যে স্কন্দ পুরাণ একটি। সেই স্কন্দ পুরাণে কাশির উল্লেখ্য রয়েছে। রাজা দক্ষ একটি যজ্ঞানুষ্ঠান করেছিলেন। ভোলানাথ শিব রাজা দক্ষের জামাই ছিলেন। রাজা দক্ষ কখনোই শিবকে জামাই হিসেবে মেনে নেননি। কারণ মহাবীর শিব সর্বদাই ছিলেন উদাসীন এবং নেশা ও ধ্যানগ্রস্ত। উক্ত যজ্ঞানুষ্ঠানে মুনি-ঋষিগণ ও অন্যান্য দেবতাগণ নিমন্ত্রিত হলেও রাজা দক্ষ জামাই তথা দেবী দুর্গার স্বামী ভোলানাথ শিব নিমন্ত্রিত ছিলেন না। এ কথা শিবের সহধর্মিনী জানা মাত্রই ক্ষোভে দেহ ত্যাগ করেন। শিব তার সহধর্মিনীর মৃত্যু যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে উন্মাদ হয়ে শব দেহটি কাঁধে নিয়ে পৃথিবীর সর্বস্তরে উন্মাদের ন্যায় ঘুরতে থাকেন এবং প্রলয়ের সৃষ্টি করেন। সে মুহূর্তে স্বর্গের রাজা বিষ্ণুদেব তা সহ্য করতে না পেরে স্বর্গ হতে একটি সুদর্শনচক্র নিক্ষেপ করেন। চক্রের স্পর্শে শব দেহটি ৫২টি খণ্ডে বিভক্ত হয়। শবের ৫২টি খণ্ডের মধ্যে বাংলাদেশে পড়ে দুইটি খণ্ড। একটি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে আরেকটি পঞ্চগড়ের বোদেশ্বরীতে। মহামায়ার খণ্ডিত অংশ যে স্থানে পড়েছে তাকে পীঠস্থান বলা হয়। বোদেশ্বরী মহাপীঠ এরই একটি।
তিনি আরও জানান, ১৯৯২ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর প্রত্নতাত্বিক ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসাবে তালিকাভুক্ত করে। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান ভাগাভাগির পর প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে ভক্তের উপস্থিতি কমতে থাকে। দীর্ঘদিন পর গত বছর প্রথম এই তীর্থস্থানে মহালয়া উদযাপন করা হয়।
কথিত আছে, বখতিয়ার খিলজি তিব্বত অভিযান থেকে প্রত্যাবর্তনকালে এ মন্দির চত্বরে আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দা নিরঞ্জন বর্মন বলেন, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলার লোক প্রতিদিন আসে। মহালয়ার বড় অনুষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষ আসে এখানে।
শ্রী সমুন চন্দ্র রায় নামের এক বাসিন্দা বলেন, “আমরা মন্দির সম্পর্কে তেমন জানি না। অনেক পুরাতন মন্দির, কবে হয়েছে সেটা আমার নানাও বলতে পারে না।”
বোদেশ্বরীর মন্দিরের নাম অনুসারে বোদা উপজেলার নামকরণ করা হয়। এই বোদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দিরটি এখনও প্রত্নতাত্বিক ঐতিহ্যের নিদর্শন বহন করে।