শিশুর মোবাইল গেমসে আসক্তির কুফল (ভিডিওসহ)

তথ্য-প্রযুক্তির বিপ্লব যেমন সুফল বয়ে নিয়ে এসেছে ঠিক তেমনি অনেক সমস্যার কারণ হিসেবেও দাঁড়িয়েছে। টেলিভিশন দেখে সময় পার অথবা ভিডিও গেমস খেলা এখন শিশুদের নেশায় পরিণত হয়েছে। বাচ্চাকে টিভি দেখতে অথবা মোবাইল গেমস খেলতে না দিলে খেতে চায় না-এমন অভিযোগ আজকাল অনেক অভিভাবকের মুখেই শোনা যায়।
শিশুর মোবাইল গেমসে আসক্তির কুফল (ভিডিওসহ)

পর্যাপ্ত মাঠের অভাব শহরগুলোর পুরনো সমস্যা। যার কারণে শিশুরা অবসর কাটাতে বেছে নেয় টিভি অথবা ভিডিও গেমস। করোনাভাইরাস এসে সেই পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।

গেমসের প্রতি আসক্তি একটি শিশুর শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর হতে পারে। ভিডিও গেমসের উপর নির্ভরতা কীভাবে শিশুকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে সেদিকে নজর দেওয়া যাক।

অস্বাভাবিক শারীরিক গঠন: শিশুরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে টিভি দেখে অথবা ভিডিও গেমস খেলে থাকে। গবেষণায় জানা যায়, যেসকল শিশুরা কোন শারীরিক শ্রম ছাড়া কমপক্ষে চার ঘণ্টা ধরে বসে টিভি দেখে বা মোবাইল গেমস খেলে তাদের প্রবল ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়াসহ নানা জটিলতা দেখা দিয়ে থাকে।

অসময়ে ঘুম: অধিকাংশ শিশুরাই রাত জেগে টিভি দেখে থাকে অথবা শুয়ে শুয়ে মোবাইলে গেমস খেলতে থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে এমন কার্যক্রমে ঘুমের সমস্যা তৈরি হয় এবং অনিয়মিত ঘুমের চক্র সৃষ্টি হয়ে যায়। 

দৃষ্টিশক্তির দুর্বলতা: ছোট বয়সেই শিশুদের চোখে চশমা দেখাটা এ যুগে অস্বাভাবিক নয়। মাত্রাতিরিক্ত ভিডিও গেইমসে আসক্তি চোখের নানা সমস্যা তৈরি করে। খুব কাছ থেকে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে চোখের জটিলতা সৃষ্টির পাশাপাশি মাথাব্যথাও দেখা দিতে পারে।

চিন্তাশক্তির হ্রাস: বর্তমান যুগে চিন্তা বা পর্যবেক্ষণ করার সময়টুকু কেড়ে নিয়েছে টিভি বা ভিডিও গেইম। শিক্ষণীয় অনুষ্ঠানের অভাব তো আছেই, টিভিতে এমন অনেক কিছুই দেখানো হয় যা বাস্তবাতার সাথে অসামঞ্জস্য। তাই শিশুর চিন্তা করার শক্তি কমে যায়।

বিরুপ আচরণ তৈরি: মারামারি বা ধ্বংসাত্মক  অনুষ্ঠান  বেশি  দেখার  ফলে  শিশুর  উগ্র  স্বভাব ও আচরণগত সমস্যা  হওয়ার  আশঙ্কা  থাকে। এমনিকি এটি তাদের মধ্যে সহিংস আচরণ তৈরি করে। পড়ালেখায় অমনোযোগী করে তোলে।

ভুল অনুকরণের ঝুঁকি: শিশুরা অনুকরণ করতে বেশ পছন্দ করে। টিভিতে বা মোবাইল গেমসে এমন অনেক চিত্র সে অনুকরণ করার জন্য খুঁজে পাবে। যা সবসময় সুখকর হয়ে ওঠে না। ফাইটিং গেম বা গোলাগুলির গেম অতিমাত্রায় খেলার ফলে শিশুদের আচরণে উগ্রতা তৈরি হতে পারে। আবার সুপারম্যান হতে গিয়ে ছাদ বা উঁচুস্থান থেকে উড়ার চেষ্টায় ভয়ংকর বিপদ হতে পারে। ভয়ানক কাহিনী শিশুকে মানসিক ভাবে ভীত করে দেয়।

সমাজ থেকে দূরে সরে যাওয়া: অতিরিক্ত ভিডিও গেম খেলা শিশুদের মাথায় শুধু গেম বা গেমবিষয়ক বিষয়বস্তুই ঘোরাফেরা করে। তারা সমাজের অন্য বিষয়গুলো থেকে দূরে চলে যায়। গেমের আসক্তি তাদের অসামাজিক করে তুলতে পারে।

একাকীত্ব: শৈশবে বন্ধুরা একসাথে খেলাধুলা করবে, হৈ-হুল্লোড় হবে এটাই স্বাভাবিক। নতুন বন্ধু তৈরি করার জন্য শৈশবই আদর্শ সময়। ভিডিও গেমস বা টিভির প্রতি আসক্তি মানুষকে একা করে তোলে। কারণ এসময় অন্যদের সাথে যোগাযোগ বা কথা-বার্তা বলার ইচ্ছা জাগে না। এমনকি বাবা-মা সাথেও সন্তানের দূরত্ব সৃষ্টি হয়।

মানসিক সমস্যার সৃষ্টি: ভিডিও গেইমসের প্রতি আসক্তি বেড়ে গেলে তা মানসিক সমস্যায় রূপ নেয়। নতুন কিছু কল্পনার জায়গা থেকে শিশুরা সরে আসে। অতি মাত্রায় টিভি দেখা বা ভিডিও গেম খেললে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ব্যহত হতে পারে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com