পথের পাঁচালীর বিভূতিভূষণ

নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন বাংলা সাহিত্য বইতে আমার সবচেয়ে প্রিয় গল্প ছিল আম-আঁটির ভেঁপু।
পথের পাঁচালীর বিভূতিভূষণ

গল্পে গ্রামীণ জীবনে দরিদ্রতার মাঝেও দূর্গা ও অপু দুই ভাই-বোনের আনন্দিত ও খুনসুটির চিত্র ফুটে উঠেছে। গল্পটি একটি সোনালী শৈশবকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

একদিন ক্লাসে আমার শিক্ষক হেলেন ম্যাম এই গল্পটি পড়াতে গিয়ে বলেন, এটি পথের পাঁচালি উপন্যাস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। উপন্যাসটি বহু ভাষায় অনুবাদ হয়েছে এবং একে নিয়ে সিনেমাও তৈরি হয়েছে।

লেখক উপন্যাসে গ্রামের এক চিরায়ত গল্প ফুটিয়ে তুলেছেন। ম্যাম বললেন, তোমাদের সবার উচিত উপন্যাসটি পড়া। যেহেতু গল্পটি আমার কাছে ভালো লেগেছে তাই পথের পাঁচালি উপন্যাসটি কেনার ইচ্ছে জাগে। কিন্তু বই কেনার মত টাকা তো নাই হাতে। তাই বুদ্ধি করলাম ছোট বোনের জন্য জন্মদিনের উপহারের কেনার কথা বলে আম্মুর কাছে টাকা চাইব। এতে এক ঢিলে দুই পাখি মারা হবে। বোনকে জন্মদিনের উপহারও দেয়া হলো, সঙ্গে আমার উদ্দেশ্যও হাসিল হলো।

অবশেষে কেনা হলো বই। হাতে পেয়ে সাতদিনেই শেষ করে ফেলি। গল্পটি সত্যিই আমায় টেনেছিল। এরপর সেই পথের পাঁচালির স্রষ্টা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়কেও জানতে ইচ্ছে জাগল মনে।

তিনি ১৮৯৪ সালে চব্বিশ পরগনা জেলায় মামার বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস ওই জেলারই ব্যারাকপুরে। তার মার নাম মৃণালিনী দেবী ও বাবার নাম শাস্ত্রী মহামন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে বিভূতিভূষণ ছিলেন সবার বড়।

তিনি মূলত উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখে খ্যাতি অর্জন করেন। পথের পাঁচালী ও অপরাজিত তঁর সবচেয়ে বেশি পরিচিত উপন্যাস। তিনি তিনশ এর বেশি ছোট গল্পসহ মোট ১৬টি উপন্যাস লিখেন।

তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই হলো অপরাজিতা, অপু সংসার, নিমন্ত্রণ ও আলো ইত্যাদি। ১৯৫১ সালে ইচ্ছামতী উপন্যাসের জন্য তিনি মরণোত্তর রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত হোন। মৃত্যুর পর তার অসমাপ্ত লেখা কাজল এবং অনশ্বর শেষ করেছেন অন্যরা। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো তিনিও তার জীবনদশায় 'সুন্দরবনে সাত বৎসর' নামে ভুবনমোহনের একটি অসমাপ্ত কিশোর উপন্যাসের কাজ সমাপ্ত করেন।

১৯৫০ সালের পহেলা নভেম্বর ৫৬ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন এই কিংবদন্তী সাহিত্যিক।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com