নারী জাগরণের অগ্রদূত

নারীদের স্বাতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠার জন্য আমৃত্যু সংগ্রাম করে যাওয়া বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যবার্ষিকী সোমবার।
নারী জাগরণের অগ্রদূত

বেগম রোকেয়া শুধু একজন সমাজ সংস্কারক বা কর্মী ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন খ্যাতিমান বাঙালি সাহিত্যিকও।

রোকেয়া ১৮৮০ সালে রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে বিখ্যাত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা জহীরুদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সম্ভ্রান্ত ভূস্বামী ছিলেন। তার মা রাহাতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরানী। রোকেয়ার দুই বোন করিমুননেসা ও হুমায়রা আর তিন ভাই, যাদের একজন শৈশবে মারা যায়।

তৎকালীন মুসলিম সমাজ ব্যবস্থা অনুসারে রোকেয়া ও তার বোনদের বাইরে পড়াশোনা করতে পাঠানো হয়নি। মাত্র পাঁচ বছর বয়স থেকে শিশু রোকেয়াকে পর্দা করতে হতো। তার পরিবারের মেয়েরা কুরআন শরীফ ছাড়া অন্য কোনো বই পড়তে পারতেন না। তাকে ও তার বোনকে ঘরে আরবি ও উর্দু শেখানো হতো।

কিন্তু লেখাপড়ার ব্যাপারে রোকেয়ার খুব আগ্রহ ছিল। তার বড় ভাই ইব্রাহীম সাবের আধুনিকমনস্ক ছিলেন। তিনি রোকেয়া ও তার বোন করিমুননেসাকে ঘরেই গোপনে বাংলা ও ইংরেজি শেখান। এভাবে তার পড়ালেখা চলতে থাকে।

১৮৯৬ সালে ১৬ বছর বয়সে রোকেয়ার বিয়ে হয় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে। বিয়ের পর তিনি 'বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন' নামে পরিচিত হন। ভাইয়ের মতো রোকেয়ার স্বামীও মুক্তমনা মানুষ ছিলেন। সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন রোকেয়ার লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে উৎসাহিত করতেন। স্বামীর উৎসাহ ও প্রেরণায় বাংলা ও ইংরেজি ভাষা আয়ত্ত করেন এবং একটি স্কুল তৈরির জন্য অর্থ আলাদা করে রাখেন।

রোকেয়া এক সময় সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। ১৯০২ সালে 'পিপাসা’ নামে একটি বাংলা গল্প লিখে সাহিত্য জগতে পা রাখেন। তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রচনা হলো সুলতানাস ড্রিম। এটিকে বিশ্বের নারীবাদী সাহিত্যে একটি মাইলফলক ধরা হয়। তার অন্যান্য গ্রন্থগুলি হলো পদ্মরাগ, অবরোধবাসিনী, মতিচুর। নবনূর, সওগাত, মোহাম্মদী ইত্যাদি পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশিত হয়।

১৯০৯ সালে সাখাওয়াত হোসেন মারা যাওয়ার পর রোকেয়া সমাজসেবা ও সমাজে নারীশিক্ষা বিস্তারে পুরোপুরি মন দেন। এর পাঁচ মাস পর রোকেয়া সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল নামে একটি মেয়েদের স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন ভাগলপুরে। প্রাথমিক অবস্থায় স্কুলে ছাত্রী ছিল আট জন। চার বছরের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৪-তে। ১৯৩০ সালের মধ্যে এটি হাই স্কুলে পরিণত হয়।

স্কুল পরিচালনা ও সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত রোকেয়া নিজেকে সাংগঠনিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত রাখেন। ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া মৃত্যুবরণ করেন।

প্রতিবছর ৯ ডিসেম্বর রোকেয়া দিবস হিসেবে পালিত হয়।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com