বলা হয় ‘যশোরের যশ, খেজুরের রস।’ এই প্রবাদটি ঠিক কতটা সত্য তা যশোরের খেজুরের রস বা গুড় খেলেই বোঝা যায়।
এরই মধ্যে গাছিরা গাছ রস সংগ্রহের জন্য হাড়ি পেতেছে গাছে গাছে। যারা খেজুর গাছ থেকে বিশেষভাবে রস সংগ্রহ করতে পারদর্শী তাদেরকে গাছি বলা হয়।
শীতের মৌসুম আসলে যশোরে খেজুরগাছ কাটার উৎসব শুরু হয়। খেজুরের গুড় তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে গাছিরা। গুড়ের মৌ মৌ গন্ধে ভরে ওঠে পুরো গ্রাম। তাদের মুখের হাসি ফুটে উঠে ঠিক মিষ্টি গুড়ের মতোই।
এবার আবহাওয়া ভালো থাকার কারণে গুড় তৈরিতে গাছিরা বেশ লাভবান হবে বলে ধারণা করছেন তারা।
কয়েকজন গাছির সঙ্গে কথা হয় আমার। তারা জানান বহু বছর থেকেই গাছ কেটে রস সংগ্রহ করে আসছেন তারা। তবে গাছ কমে যাওয়ায় অনেকেই আর এই পেশায় নেই।
যশোরের খেজুরের গুড়ের চাহিদা সারাদেশ জুড়ে। যশোরের ঐতিহ্য ছিল খেজুরের রস এবং গুড়ের মধ্যে। বর্তমান সময়ে ঐতিহ্য আজ বিলুপ্তির পথে। বর্তমানে গুড় উৎপাদনের খরচ বেশি হওয়ায় লাভ কমে গেছে।
খেজুরে রস ও গুড় খুব জনপ্রিয় হলেও এই রস খেলে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নিপাহ ভাইরাস ছড়ায় মূলত বাদুড়ের মাধ্যমে। বাংলাদেশে সাধারণত ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এই সময়টাতেই খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয়। আর বাদুড় গাছে বাঁধা হাড়ি থেকে রস খাওয়ার চেষ্টা করে বলে ওই রসের সঙ্গে তাদের লালা মিশে যায়। সেই বাদুড় নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকলে এবং সেই রস খেলে মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে এ ভাইরাস। আক্রান্ত মানুষ থেকে মানুষেও ছড়াতে পারে এ রোগ।
এ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর ও মানসিক অস্থিরতায় ভোগেন। এক পর্যায়ে খিচুনিও দেখা দিতে পারে। মস্তিস্কে ভয়াবহ প্রদাহ দেখা দেয়।
নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে খেজুর গুড় ও রস, আখের রস, পেঁপে, পেয়ারা, বরইয়ের মতো ফল না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।