বই হোক প্রাণের বান্ধব

বই হোক প্রাণের বান্ধব

বই শব্দটির মাঝে লুকিয়ে আছে জ্ঞান ও ধ্যান। বইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক অনেকটা গভীর, তা বলা চলে না।

ছোটবেলা থেকে খুব পড়া চোর ছিলাম। আজও বোনেরা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। আমি নাকি স্যার এলে চোখ বন্ধ করে রাখতাম।  এর জন্য কত যে মার খেয়েছি তার হিসাব নেই।

পাঠ্যবই, গল্প বই কোনো বই পড়তে আমার ভালো লাগত না। যদি ও ছোট থাকতে প্রচুর গল্প শুনতে ভালবাসতাম। বইয়ের সাথে আমার প্রথম প্রণয় হয় ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময়। কোনো এক কুইজ প্রতিযোগিতায় দীপু নাম্বার-২ বইটি পুরস্কার পাই।

হাজার হোক পুরস্কার তো। তাই এটার প্রতি ভালোবাসা ছিল অন্য রকম। ওটা নিয়ে পড়া শুরু করি। দীপু নাম্বার-২ সিনেমাটি দেখা ছিল। তাই বইটি পড়তে আরও ভালো লাগল।

বইটা শেষ করে প্রাইভেট টিচারের শাকিল স্যারের সাথে ভালো লাগার কথা বললাম, বইয়ের কাহিনীও বললাম।

স্যার আমার গল্প বলার ধরণ দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন হয়তো। এর কিছুদিন পরই আমার জন্মদিন ছিল। স্যার আমার জন্মদিনে উপহার হিসেবে আনিসুল হকের ‘মা’ বইটি উপহার দেন।

বই পেয়েই পড়া শুরু করি। এ বই পড়ে আমি সত্যিই কান্না করেছিলাম। সে থেকেই আমার গল্পের বইয়ের প্রতি আলাদা একটা ভালোবাসা জন্মায়। পড়ার টেবিলে বসে গল্পের বই লুকিয়ে রাখতাম। প্রথম দিকে আম্মু বেশ অবাক হতো বই নিয়ে আমায় বসে থাকতে দেখে। কিন্তু এক সময় বিষয়টা আম্মু বুঝতে পেরে প্রচুর বকে ছিলেন। কিন্তু স্যার আর বড় বোন এতে সমর্থন দিতেন। আমার বই কেনার বা বই পাওয়ার কোনো উৎসই ছিল না। কারণ বই কিনতে তো টাকা লাগে আর গল্পের বই পাওয়া যায় এমন লাইব্রেরি আমি চিনতামও না।

আব্বু বা আম্মুকে বইয়ের জন্য বলব তাও সম্ভব নয়। বড় বোনকে বললে সেও কিনে দিতে পারবে এমনটি নয়। কেননা বোন নিজ পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত থাকে। বইয়ের যোগান ছিল উপহার পাওয়া বা শাকিল স্যার। কিন্তু উপহার পাওয়া বা স্যারের থেকে বই ধার নেওয়া সব সময় সম্ভবও হতো না। স্যারের থেকে মাঝে মাঝে যেসব বই পেতাম তা দিয়ে মনের খোড়াক মিটাতাম। এক প্রকার ভালোই আসক্তি জন্মেছিল বইয়ের প্রতি।

আমার পড়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো, জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলো, সমরেশ মজুমদারের কালবেলা, মানুষের মা, কালপুরুষ, শরৎ চন্দ্রের বড় দিদি, গৃহদাহ, পথে দাবি, বঙ্কিমচন্দ্রের নির্বাচিত রচনা সমগ্র, বিভুতিভূষণের পথের পাঁচালি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পোস্ট মাস্টার, ম্যাক্সিম গোর্কির মা, হুমায়ুন আহমদের হিমু, চোখ, তিন পুরুষ ইত্যাদি।

তবে আমার প্রিয় বইয়ের তালিকায় থাকা শীর্ষ দুইটি বই হচ্ছে দীপু নাম্বার-২ ও আনিসুল হকের মা। জীবনের সেরা দুইটি উপহার ছিল এই বইগুলো।

শুধু একবার নয় অসংখ্যবার পড়েছি এ বই দুইটি। কিন্তু এ দুই বইয়ের প্রতি আমার ভালোলাগা বিন্দু মাত্র কমেনি। এখন পাঠ্য বই বেশি হওয়াতে গল্পের বই কম পড়া হলেও ঘুমের সময় আমার সাথী হয় গল্পের বইগুলো।

সবসময় চেষ্টা থাকে বই পড়ার। হাতে টাকা থাকলেই প্রথমে যে জিনিসটা কেনা হয় তা হলো গল্পের বই। মাঝে মাঝে ছোট বোনটাকেও উপহার দেই।

২৩ এপ্রিল বিশ্ব বই পড়া। এই দিবসের কথা মনে হতেই এতগুলো কথা বলা। বই পড়ার প্রতি আগ্রহ ও ভালোবাসা জন্মাতে এদিনটি পালন হয়ে আসছে।

বই দিবসের ধারণাটি আসে স্পেনের লেখক ভিসেন্ত ক্লাভেল আন্দ্রেসের কাছ থেকে। ১৬১৬ সালের ২৩ এপ্রিল মারা যান স্পেনের আরেক বিখ্যাত লেখক মিগেল দে থের্ভান্তেস। তবে শিষ্য ছিল আন্দ্রেস। ১৯২৩ সালের ২৩ এপ্রিল থেকে গুরুর স্মরণে আন্দ্রেস স্পেনে বই দিবস পালন করা শুরু করেন। এর পর দাবি ওঠে প্রতিবছরই দিনটি পালন করার। কিন্তু তার এই মহৎ দাবি কারো নজর কাড়েনি। তাকে অপেক্ষা করতে হয় বহুদিন। মিগেল দে’র মৃত্যুর দিন ছাড়াও শেক্সপিয়র, সত্যজিৎ রায়দের মতো কিংবদন্তি সাহিত্যকদের জন্ম ও মৃত্যু দিবস এ দিনটি।

অবশেষে ১৯৯৫ সালে ইউনেস্কো দিনটিকে বিশ্ব বই দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং পালন করতে শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর ২৩ এপ্রিল বিভিন্ন দেশে বই দিবস পালন করা হয়।

Related Stories

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com