সড়কে মৃত্যুর মিছিল

দুটো গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হয়েছে অনেকে। ট্রাক উল্টে খাদে পড়ে গিয়েছে। একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি মটর সাইকেলকে চাপা দিয়েছে। চালকের অসাবধানতায় পথচারীর মৃত্যু।
সড়কে মৃত্যুর মিছিল

খবরের কাগজের পাতায়, টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রাখলে পাওয়া যায় এধরনের অসংখ্য সড়ক দুর্ঘটনার খবর।

প্রতিদিনই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। এতে শুধু যে যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা নয়, এসকল দুর্ঘটনয় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে অনেক তাজা প্রাণ, অনেকে বীভৎষভাবে আহত হয়ে বরণ করেছে পঙ্গুত্ব, হয়ে গেছে কর্মক্ষমতাহীন।

কিছুদিন আগে দুটো বাসের চাপায় তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব তার একটি হাত হারায়। এরপর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরনের কারণে তার মৃত্যু হয়।

একইভাবে শরীর থেকে হাত বিচ্ছিন্ন হয় হৃদয় নামের আরেকটি ছেলের। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই বাসের ধাক্কায় ছিটকে পড়ে গিয়ে পা হারায় রোজি।

কেন ঘটছে এত সড়ক দুর্ঘটনা? শুধু রাজীব, হৃদয় আর রোজী এ তিনটি নাম প্রচার হয়েছে। কিন্তু এদেরই মতো অসংখ্য নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ  এধরনের মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে এবং প্রতিদিনই হয়ে চলেছে।

সড়ক দুর্ঘটনায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম এবং প্রাণহানির দিক থেকে এশিয়ার মধ্যে রয়েছে সপ্তম অবস্থানে।

২০১৫ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর ২১ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যায়। অথচ যাত্রী কল্যাণ সমিতি ও সরকারি হিসাব অনুযায়ী ওপরের হিসাবের সাথে সঙ্গতি কম।  

গেল বছরই দুর্ঘটনার রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশে। সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে তিন হাজার ৩৪৯টি। এত দুর্ঘটনা অন্য বছর সংঘটিত হয়নি।

অদক্ষ, অসচেতন, প্রশিক্ষনবিহীন চালকদের দ্বারা যানবাহন চালনা এর মূল কারণ। দেশের ব্যস্ত সড়কগুলিতে যানবাহনের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটে থাকে।

রাজধানীতে ৮৭ শতাংশ বাস-মিনিবাস এই নৈরাজ্যে জড়িত। এছাড়াও ফিটনেসবিহীন যানবাহন, নিয়ম ভেঙে ওভারটেকিং, লাইসেন্সবিহীন ও ভূয়া লাইসেন্সধারী চালক, দুর্বল ট্রাফিক আইন, ট্রাফিক পুলিশের অনৈতিক কার্যকলাপ, ট্রাফিক সিগন্যাল না মানা ইত্যাদি কারণেও হয়ে থাকে সড়ক দুর্ঘটনা।

শুধু চালক আর সমন্বয়কারীদের অসচেতনতার কারণেই দুর্ঘটনা ঘটে না। প্রায়শই পথচারীদের অসাবধানতার কারণেও তারাই এর শিকার হয়।

জাতিসংঘ ২০১১ থেকে ২০২০ সালকে 'সড়ক নিরাপত্তা দশক' হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই ১০ বছরে বাংলাদেশসহ সদস্যদেশগুলো সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা অর্ধেক নামিয়ে আনার অঙ্গীকার করেছে। কিন্তু ছয় বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশে কমেনি সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সংখ্যা।

দুর্ঘটনা কমাতে সরকারের সুনির্দ্দিষ্ট কোন লক্ষ্য নেই বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক শামসুল হক। গণমাধ্যমকে তিনি জানান, দুর্ঘটনা কমাতে আলাদা বাজেটও নেই। এভাবে দুর্ঘটনা কমানো যায় না।

তাই দেশে সড়ক দুর্ঘটনা এবং এরফলে সংঘটিত মৃত্যুর হার হ্রাস করতে সরকার ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও এক্ষেত্রে এগিয়ে আসা দরকার। সমস্যা যখন জাতীয়, তখন এর দূরীকরণে সবার ভূমিকা থাকা উচিত। নয়ত সড়কে মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলবে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com