সেলিনা পারভীন জন্মেছিলেন ১৯৩১ সালের ৩১ মার্চ। বাবার নাম আবিদুর রহমান এবং মা সাজেদা খাতুন। ফেনীর সরলা বালিকা বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা পান সেলিনা। প্রতিকূলতার কারণে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়।
১৯৪২ সালে ছোট কল্যাণনগরে চলে আসেন। প্রাইভেটে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দেন। কিন্তু পাস করতে পারেন নি।
কলকাতা নিবাসী শিক্ষয়িত্রী উমার সাহচর্যে সেলিনা সাহিত্য সাধনার প্রেরণা পান কিশোরগঞ্জ জেলার মোহনগঞ্জে থাকার সময়। কবিতা দিয়ে তার সাহিত্য অঙ্গনে পথচলা শুরু। সে সময়ের পত্রিকা পূর্বদেশ, আজাদ, দৈনিক পাকিস্তান, সংবাদ, ইত্তেফাক ও বেগম পত্রিকায় প্রকাশিত হতো সেলিনার লেখা।
১৯৬৯ সালে তার চেষ্টায় সম্পাদিত ও প্রকাশিত হয় শিলালিপি পত্রিকা।
দেশের প্রায় সব বুদ্ধিজীবীদের লেখা নিয়ে প্রকাশিত শিলালিপি শত্রু-মিত্র সবারই নজর কেড়েছিল।
১৯৬৯ এ তিনি ছেলেকে সাথে নিয়ে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে গণ অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেন। এই সুবাদে ঢাকার বুদ্ধিজীবী মহলে অনেকের সাথেই ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেন তিনি। ১৯৭১ এ অনেক যোদ্ধা তরুণদের তিনি সাহায্য করেছেন। আশ্রয় দিয়েছেন। কিন্তু আগস্ট-সেপ্টেম্বরের পর শত্রুর নজরে আসার পর, শিলালিপি-র আর কোনো সংখ্যা তিনি বের করতে পারেননি।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তার শিলালিপি পত্রিকার প্রচ্ছদ ও লেখার বিষয়গুলো পাকসেনাদের দোসর রাজাকারদের পছন্দ হয়নি। সে সময়ে তিনি ঢাকার মুক্তিযোদ্ধাদেরও সহযোগিতা করতেন। এসব কাজ তাকে শত্রুবাহিনীর কাছে শত্রু করে তোলে। গ্রেপ্তারের তালিকায় তার নাম ওঠে।
দেশ যখন প্রায় মুক্ত হয়ে আসছে, ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর; আলবদর বাহিনীর সদস্যরা তাকে সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। বধ্যভূমিতে চোখবাঁধা অবস্থায় পড়েছিল তার মরদেহ। ১৮ ডিসেম্বর তাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
সেলিনা পারভীন হলেন নারী সাংবাদিকদের শক্তি। তার থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই আমরা দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাব স্বাধীন বাংলার উন্নয়নে, তার রক্তের ঋণ শোধ করতে।
১৯৯১ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বাংলাদেশ সরকারের ডাকবিভাগ সেলিনা পারভীনের নামে স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ করে।
পরাজয় আসন্ন বুঝতে পেরে দেশটিকে পঙ্গু করে দিতে, এই ঘৃণ্য পাক হানাদার বাহিনী আর তাদের দোসর রাজাকার ও আলবদর বাহিনী; সেলিনা পারভীনের মতো অনেক বুদ্ধিজীবীকে ধরে ধরে রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে হত্যা করে।
১৯৭১ সালের ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর, রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বরেণ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকসহ দেশের মেধাবী সন্তানদের চোখ বেঁধে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে চালায় নির্মম নির্যাতন ও পৈচাশিক হত্যাকান্ড।
হত্যাযজ্ঞের পর ঢাকার মিরপুর, রায়েরবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই বুদ্ধিজীবীদের লাশ ফেলে রেখে যায়। স্বাধীনতার পরে তাদের অনেকের লাশও পাওয়া যায় না।
সারা দেশে জানা ও অজানা এরকম অসংখ্য বধ্যভূমি রয়েছে।
আন্তর্জাতিক নিউজ ম্যাগাজিন ‘নিউজ উইক’-এর প্রকাশিত সংবাদ থেকে থেকে জানা যায়, শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা ছিল এক হাজার ৭০ জন। আজ সেই ১৪ই ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস।
এই দিনে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের জন্য শ্রদ্ধাঞ্জলি।