এলাকায় বিশুদ্ধ পানির বড় অভাব। একটি মাত্র টিউবওয়েল, শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে নানাবিধ রোগে, হাঁটতে হাঁটতে জানালেন নিলুফা বেগম নামক বৃদ্ধ নারী।
Published : 05 Aug 2023, 12:10 PM
গুচ্ছগ্রাম। যার আরেকটি নাম আদর্শগ্রাম। ১৯৯০ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম এ মুনএম অপারেশন ঠিকানা তেতুলিয়া গুচ্ছগ্রাম উদ্বোধন করেন। যার অবস্থান পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নে।
ইউনিয়নটির এক ওয়ার্ডের একটি বিচ্ছিন্ন গ্রাম এ গুচ্ছগ্রাম৷ গুচ্ছগ্রামে ৫০টি ঘর রয়েছে। পাঁচ শতাধিক মানুষের বসবাস এ গ্রামে।
তবে জানা যায়, তৎকালীন সময়ে হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ সরকারের আমলে বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষকে এই গ্রামে আশ্রয় দেয়া হয়। গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা প্রায় সবাই দরিদ্র সীমার নিচে অবস্থান করে। তবে এ এলাকার শিশুদের লেখাপড়ার প্রতি বেশ তৎপর অভিভাবকরা।
গ্রামের সবাই ঋণগ্রস্ত। অধিকাংশ নারীরা মানুষের বাসায় বাসায় কাজ করে জীবীকা নির্বাহ করে আর পুরুষরা দোকানদার, দিনমজুর, জেলেসহ বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত। এই গ্রামে রয়েছে ছোটো দুটি দোকান। দোকানি হলেন নারীরা। মানুষগুলো সহজ-সরল।
গুচ্ছগ্রামে মানুষের লাগামহীন দুর্ভোগ থাকা সত্ত্বেও তারা সুখে-শান্তিতে দিনযাপন করে। তবুও রয়েছে নানাবিধ সমস্যা; তাদের প্রধান সমস্যা জোয়ারের পানিতে পুরো গ্রাম তলিয়ে যায়। এছাড়াও রয়েছে নিরাপদ পানির অভাব, একটি মাত্র টিউবওয়েল, সাপ্লাইয়ের পানি না ওঠায় ভোগান্তি, মসজিদে নামাজ না পড়তে পারার কষ্ট।
সবচেয়ে বেশি যে কষ্ট সেটি হচ্ছে, মৃত্যুর পর শেষ ঠিকানা যে কবর, সেই কবর দেয়ার ভিটে নেই এখানকার মানুষের।
গুচ্ছগ্রাম ঘুরে এখানকার মানুষের সাথে কথা বলে হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম।
গুচ্ছগ্রামে ঢুকেই দেখা যায় একটি ভাঙা ঘর। এই ঘরেই বসবাস করেন রাবেয়া বেগম। জানালেন দারিদ্রতার কারণে মাত্র ১৩ বছর বয়সেই বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে।
তিনি বলেন,‘‘আমার বাবা মা অল্প বয়সের সময় বিয়ে দিয়েছে। তখন আমার বয়স ১৩ বছর। এখন ভাঙ্গা ঘরে থাকি স্বামী, শাশুড়ি, শ্বশুর নিয়ে থাকি। আমার স্বামী কাঁচামালের ব্যবসা করে আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি।’’
এই ছোট্ট গ্রামেই ১১ বছর ধরে একটি ছোট দোকান দিয়ে কোনো রকম বেঁচে আছেন আমেনা বেগম নামের ৭০ বছর বয়সী এক নারী।
তিনি বলেন, ‘‘আমি আমার স্বামী থাকতে দোকানদারি করি। আমার স্বামী মারা গেছে৷ আমার একটা ছেলে দিনমজুরি করে দিন আনে দিন খায়৷ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি৷ সমস্যার অভাব নাই৷"
গ্রাম ঘুরতে ঘুরতে দেখা হয় খাদিজা বেগম নামের ৭০ বছর বয়সী আরেক নারীর সঙ্গে। তার চোখেমুখে অভিযোগের ছাপ। দেখালেন তিন বছর যাবত নষ্ট হয়ে পড়ে থাকা একটি সাপ্লাইয়ের পানির মেশিন ও টাঙ্কি।
বললেন, ‘‘আমরা এখানে বসবাস করছি৷ এখানে সাপ্লাইয়ের পানি দেয়া হয়েছে কিন্তু খেতে পারি না। লবণ পানি হওয়ায় মুখে নেয়া যায় না। আজ ৩০-৩৫ বছর ধরে এখানে বসবাস করতেছি, জোয়ার যখন আসে তখন আর থাকার মত স্থান থাকে না। ছোট বাচ্চাদের ঘরে রাখা মুশকিল হয়ে পরে। ’’
এলাকায় বিশুদ্ধ পানির বড় অভাব। একটি মাত্র টিউবওয়েল, শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে নানাবিধ রোগে, হাঁটতে হাঁটতে জানালেন নিলুফা বেগম নামক বৃদ্ধ নারী।
তিনি বলেন, ‘‘আমরা বাস্তুহারা, আমরা এই জায়গায় থাকি, আমি পঙ্গু মানুষ। আমি একটা বয়স্কভাতা, পঙ্গুভাতা কিছু পাই না৷ আমার স্বামী নাই৷ এই জায়গাতে নিরাপদ পানির উৎস নাই৷ একটা টিউবওয়েল। এইখানে পানিতে তলিয়ে যায় সবকিছু। আমাদের আশ্রয়ের কোনো জায়গা নাই। আমাদের বিশুদ্ধ পানির জন্য টিউবওয়েল চাই।’’
ভাঙাচুরা ঘরে থাকেন ফিরোজা নামের বৃদ্ধ নারী।
তিনি বলেন, ‘‘আমি এইখানে ৩০ বছর ভাঙা ঘরে ছাপড়া দিয়ে থাকি। জোয়ারের পানিতে পুরো এলাকা প্লাবিত হলে আমাদের অনেক অসুবিধে হয়।
ফিরোজা বেগম নামে আরেক নারী জানালেন, ‘‘এখানে ৫০টি ঘর রয়েছে। পান করার মতো বিশুদ্ধ পানির অভাব, কোনল পুকুর নাই, পাশের খালের পানি দিয়ে আমাদের সব ধরনের কাজ করতে হয়। এলাকা তলিয়ে যায়। এখানে থাকতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়।’’
গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর রাসেল আকনের সঙ্গে কথা বলে হ্যালো।
তিনি জানালেন, এটি একটি আদর্শ গ্রাম। ৫০-৫২ বছর এ গ্রামের বয়স। এখানে একটি মসজিদ নির্মান করা হয়েছে। তবে জোয়ারের পানির ফলে এখানে নামাজ পড়া যায় না। জোয়ারের পানিতে মা বোনের অনেক কষ্ট, একটি মাত্র টিউবওয়েল, একটা সাপ্লাই দেয়া হয়েছে কিন্তু তাতে ঠিকমত পানি ওঠে না।’’
প্রতিবেদকের বয়স: ১৬। জেলা: পটুয়াখালী।