ছিটমহলবাসীর আটষট্টি বছরের পরিচয়হীনতার কষ্ট দূর হল ৩১ জুলাই ২০১৫ মধ্যরাতে। এখন থেকে তারা পরিচিত হবে বাংলাদেশ আর ভারত এই দুই দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে।
Published : 01 Aug 2015, 12:07 PM
শুক্রবার রাত বারোটা এক মিনিটে বাংলাদেশের পঞ্চগড়ের গাড়াতিতে এবং কুড়িগ্রামের দাশিয়ারছারায় থাকা ছিটমহলগুলোতে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন এবং পটকা ফাটানো হয়। সন্ধ্যা থেকে ছিটমহলবাসী তাদের আনন্দে মেতে ওঠে।
২০১৫ সালের ০১ অগস্টের আগে ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১ টি আর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১ টি সর্বমোট ১৬২ টি ছিটমহল ছিল। এই দিন মধ্যরাতে দুই দেশ মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির আওতায় যার যার নিজ সীমার ছিটমহলগুলো পরস্পরের সাথে বিনিময় করে।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসানে দেশ ভাগের সময় ব্রিটিশ আইনজীবী সিরিল রেডক্লিফের পরিকল্পনায় সে বছরই চিহ্নিত করা সীমান্তে ছিটমহল জটিলতা। এই সমস্যার অবসানে ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি হয়। এরপর তা কার্যকর করতে প্রোটোকল স্বাক্ষরিত হয় ২০১১ সালে।
গত ৭ মে ভারতের সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ওই চুক্তি বাস্তবায়নের পথ তৈরি হলে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরে সে দলিল হস্তান্তর হয়।
ছিটমহলগুলো কুচবিহার রাজ্যের কোচ রাজার জমিদারির কিছু অংশ, রাজ্যের বাইরের বিভিন্ন থানা পঞ্চগড়, ডিমলা, দেবীগঞ্জ, পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, লালমনিরহাট, ফুলবাড়ী ও ভুরুঙ্গামারিতে ছিল। ভারত ভাগের পর ওই আট থানা পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়।
এসব ছিটমহলে বিদ্যুৎ যোগাযোগ, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল ছিল না। ফলে ছিটের বাসিন্দাদের ইচ্ছা থাকলেও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করানোর সুযোগ ছিল সীমিত। অনেকেই বাংলাদেশি বা ভারতীয় ঠিকানা ব্যবহার করে লেখাপড়া করলেও ছিটমহলের বাসিন্দা হওয়ায় চাকরির সুযোগ তাদের এতোদিন হয়নি।
ছিটমহল বিনিময়ের ফলে বাংলাদেশ থেকে নাগরিকত্ব পেল প্রায় ৪০ হাজার ও ভারত থেকে প্রায় ১৪ হাজার মানুষ।