ফুলবাড়ীতে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা কীভাবে হবে- সে বিষয়ে নিশ্চিত না হয়ে কোনো কোম্পানিকে কয়লা উত্তোলনের কাজ দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী।
Published : 22 Dec 2012, 08:01 AM
ফুলবাড়ীতে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা কীভাবে হবে- সে বিষয়ে নিশ্চিত না হয়ে কোনো কোম্পানিকে কয়লা উত্তোলনের কাজ দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী।
এশিয়া এনার্জিকে ওই কাজ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান উপদেষ্টা।
শনিবার বিদ্যুৎ ভবনে এক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত পদ্দতিতে কয়লা উত্তোলণ করতে গেলে ভূগর্স্থ পানির ব্যবস্থাপনা কীভাবে হবে সেটা আমরা এখনো জানি না। এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য আই ডব্লিউ এমকে (ইন্সস্টিটিউট অব ওয়ারটার ম্যানেজমেন্ট) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পানি ব্যবস্থাপনার বিষয়ে আগে নিজে নিশ্চিত হতে হবে, পরে কাজ দেয়ার সিদ্ধান্ত।”
এদিকে ফুলবাড়ীতে কয়লা উত্তোলনের জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতির অপেক্ষায় রয়েছে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল কোল ম্যানেজমেন্ট (জিসিএম) রিসোর্সেস। আগে এশিয়া এনার্জি নামে পরিচতি এ প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে প্রকল্পটি নিয়ে বাংলাদেশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে।
বৃহস্পতিবার লন্ডনে জিসিএম এর বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জেরার্ড হোল্ডেন বলেন, “গত নয় মাস ধরে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সব সরকারি কর্মকর্তা ও কয়লার সম্ভাব্য ক্রেতাদের সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি। এখন আমরা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করছি।”
চেয়ারম্যানের বক্তব্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় ফুলবাড়ী প্রকল্প এলাকায় জরিপের কাজও প্রায় শেষ করে এনেছে জিসিএম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, “এটা পুরনো ইস্যু। আগের বিষয়। এ ব্যাপারে মন্তব্য করে আমি বিতর্কে যেতে চেই না।”
এশিয়ার এনার্জি কাজ পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা চেষ্টা করছে কি না এবং ব্রিটিশ দূতাবাস এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে কোনো চিঠি দিয়েছে কি না জানতে চাইলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক বলেন, “কোনো কোম্পানি কাজ করতে চাইবে- এজন্য তারা ব্যক্তিগতভাবে চিঠি দিতে পারে, তাদের সরকারের মাধ্যমেও চিঠি দিতে পারে। কিন্তু কি করা হবে সেটা আমরা বিবেচনা করব। দেশের জন্য যেটা ভাল হবে সেটাই আমরা করব।”
উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের প্রতিবাদে এবং এশিয়া এনার্জিকে দেশ থেকে বহিষ্কারের দাবিতে ২০০৬ সালের ২৬ অগাস্ট ফুলবাড়ীতে জনতার বিক্ষোভে পুলিশ গুলি চালালে তিনজন নিহত হন। এরপর এই প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় প্রতিষ্ঠানটি।
সম্প্রতি ওই এলাকায় জিএসএমের জরিপে সহায়তার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হলে তার বিরুদ্ধে নতুন করে আন্দোলন শুরু করে স্থানীয়রা। এজন্য ফুলবাড়ীতে একদিন হরতালও পালন করা হয়।
ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা আহরণ করা হলে ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ বাস্তুহারা হবে দাবি করে এ পরিকল্পনার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে পরিবেশবাদীরাও।
এদিকে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট ম্যুভমেন্ট ও ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি প্রজেক্ট নামে দুটি সংগঠন জিএসএমের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) কাছে একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেছে।
এতে বলা হয়েছে, ফুলবাড়িতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ওই কোম্পানি ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষকে ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করবে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গেলে প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার মানুষের নিরাপদ পানির সঙ্কটে পড়ারি আশঙ্কা রয়েছে।
এশিয়া এনার্জি অবশ্য বলছে, এই খনির কারণে ৪০ হাজার মানুষ ঘর হারালেও ১৭ হাজার চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে।
ফ্রিডম অব ইনফরমেশন অ্যাক্টের প্রকাশ করা নথি অনুযায়ী, জিসিএমের কর্তাব্যক্তিরা বাংলাদেশ সরকার ও কোম্পানির মধ্যে সম্পর্ক সহজ করতে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য ও শিল্প বিভাগের কাছে অনুরোধ করেছে।
জিসিএম এর প্রস্তাবিত প্রকল্প অনুযায়ী, প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার একর জমিতে এক হাজার ফুট গভীর খনি খনন করে ৫৭২ মিলিয়ন টন কয়লা উত্তোলন করা হবে।
উত্তোলিত কয়লার পাঁচ ভাগের এক ভাগ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণে ব্যবহার করা হবে। বাকি কয়লা বিদেশে রপ্তানি হবে।
ফুলবাড়ীতে প্রস্তাবিত এ প্রকল্পের বিরুদ্ধে শুরু থেকে আন্দোলন করে আসছে বাংলাদেশের তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ, বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।