ক্ষুধা নিবারণ নাকি শিক্ষাগ্রহণ?

বস্তির অনেক শিশুই হয়তো জানে না রোজ তিন বেলাও খাওয়া যায়। সেখানে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ চলে দু'মুঠো আহার যোগাড়ের। ক্ষুধার সঙ্গে লড়াই করা এই শিশুদের কাছে শিক্ষা যেন যোজন যোজন দূরের কোনো বিষয়।
ক্ষুধা নিবারণ নাকি শিক্ষাগ্রহণ?

বস্তির কোনো ঘরের ছোট শিশুটি যখন খাবারের জন্য কান্না করছে তখন হয়ত তারই সহোদরের স্কুলে দিতে হবে পরীক্ষার ফি। রিকশা চালক বাবা কিংবা গৃহকর্মী মা কারো আয়েই যেন সংকুলান হয় না।

হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম আয়োজিত ‘বস্তির শিশুদের শিক্ষা: প্রেক্ষিত কড়াইল’ শীর্ষক' এক গোলটেবিল আলোচনায় রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে কাজ করা হ্যালোর শিশু সাংবাদিক রেশমা আক্তারের কথায় উঠে আসে এমন নির্মম চিত্র।

শিশু সাংবাদিক কারিমা ফেরদৌসী কেকা ও মো. মামুনের সঞ্চালনায় বৈঠকটি বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনায় বিশেষজ্ঞ প্যানেলে ছিলেন, একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক চেয়ারম্যান ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ এবং ব্র্যাকের আউট অব স্কুল চিল্ড্রেন এডুকেশন প্রোগ্রামের চিফ অব পার্টি মো. মাহমুদ হাছান।

এছাড়াও আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন কড়াইল বস্তির একটি বেসরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক শারমিন আক্তার, একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. নাজমুল হোসেন ও আরেক শিশু সাংবাদিক সুমাইয়া আক্তার।

বস্তির মানুষের জীবন যাপনের নাজুক চিত্র তুলে ধরে সুমাইয়া বলে, "কড়াইল বস্তির অনেকেই হয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিজের ঘরবাড়ি হারিয়ে এখানে বসবাস করছে। অথবা ঋণে জর্জরিত হয়ে শহরে এসেছে সেই ঋণ পরিশোধ করার জন্য।"

বস্তির শিশুদের স্বপ্ন নিয়ে মো. নাজমুল হোসেন বলেন, "আমাদের বস্তিতে অনেক ছেলে মেয়েরা স্বপ্ন দেখে যে আমি একদিন বড় পর্যায়ে যাব। আমিও স্বপ্ন দেখি উদ্যোক্তা হব। আমিও কিছু একটা করতে চাই। কিন্তু আমাদের এখানে যারা বসবাস করে তারাই আসলে বোঝে জীবনযুদ্ধ কাকে বলা হয়।"

শারমিন আক্তার বলেন, "আমাদের এখানে একেকজনের গল্পটা একেক রকম। মেয়েদের জন্য তো আরও কষ্টের একটা জায়গা। এমন একটা পরিস্থিতি থেকে আমি নিজে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছি।"

সবার কথা শোনার পর বিশেষজ্ঞরা যোগ করেন তাদের মতামত।

ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, "ওরা যেহেতু অর্থনৈতিক কারণে গ্রাম থেকে শহরে আসে, তাই তাদের কাছে টাকা-পয়সা থাকে না। তো তারা থাকবে কোথায়? এবং কড়াইল বস্তিতেও যদি প্রতি মাসে ভাড়া পাঁচ হাজার বা চার হাজার হয়, সেটাও তাদের পক্ষ থেকে দেওয়া সম্ভব না। ফলে শুধু তারা বস্তিতে নয়, অনেক ফুটপাত, ফ্লাইওভার এমন কি ঠেলা গাড়িতেও ঘুমায় এরা। আর দেশের অর্থনৈতিক, দেশের কৃষির যে পরিস্থিতি সে কারণে যারা গ্রামে পড়ে আছে তারাও উন্নত জীবনের আসায় শহরে চলে আসছে।"

মো. মাহমুদ হাছান ব্র্যাকের নানা পরিকল্পনা তুলে ধরার পাশাপাশি বলেন, "রাষ্ট্রের উচিত হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের শনাক্ত করতে হবে যে কতজন শিক্ষার্থী আছে। এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও ঐ ফ্লেক্সিবল টাইমের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করা সেটা করতে হবে। সেটা করতে পারলে আমরা আশা করছি যে শতভাগ শিক্ষার্থীকে শিক্ষা দান করতে পারব।"

ফারাহ কবির বলেন, "কড়াইল বস্তি থেকেও একজন ব্যারিস্টার, আর্ট কলেজের টিচার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। সমাজ ব্যবস্থা নাই কিন্তু ঠেকানোরও উপায় নাই। যাদের প্রতিভা আছে, তারা সেটা নিয়ে জীবন যুদ্ধ করেও টিকে থাকছে। আর এই সমস্যা সমাধানের জন্য, সমস্যার বিষয়গুলো চিহ্নিত করে পরিকল্পিত ভাবে কাজ করতে হবে। আর এই সমাধানের ব্যবস্থা হতে হবে এমন, যেটা শিশুদের কাজে লাগবে।"

এক ঘণ্টার কিছু বেশি সময় চলে এই আলোচনা। যেখানে উঠে আসে নগরের দরিদ্র শিশুদের শিক্ষার আওতায় আনার নানা পরামর্শ ও মতামত।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com