বুলিংসহ নানাভাবে সাইবার দুনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে শিশু-কিশোররা।
Published : 21 Apr 2021, 12:05 PM
ভূক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাইবার অপরাধীরা নানা কৌশলে ব্যক্তিগত কথোপকথন, ছবি, ভিডিওসহ নানা তথ্য হাতিয়ে নিয়ে পরবর্তীতে তা দিয়ে আক্রমণ করছে।
হ্যালোর সঙ্গে কথা হয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কিশোরীর সঙ্গে।
সে বলে, "ফেসবুকে অপরিচিত মানুষের একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে অনেক মিউচুয়াল দেখে তা আমি গ্রহণ করি। তারপর সে আমাকে ভাই হওয়ার জন্য প্রস্তাব দেয়। আমাদের মাঝে ভাই বোনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারপর সে আমাকে বিভিন্ন অশোভন কথা বলে, আমি এগুলো এড়িয়ে যাই। আমি তাকে বলতে না করি তারপর সে বলে যে ফ্রি মাইন্ডের কথা যেন বলি।”
সে আরও বলে, “আমার বন্ধুদের মধ্যে একজনের কাছে আমার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড ছিল, আইডিতে লগইন করে সে আমাদের এসব কথোপকথন দেখে আমাকে হয়রানী করতে শুরু করে। আমি তখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি।"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কিশোর হ্যালোকে বলে, "অনলাইনে গেম খেলি আমি। অনলাইনে গেম আপডেট করার জন্য ডাইমন্ড টপ আপ করা লাগে। ডায়মন্ড টপআপ করতে ডলার প্রয়োজন হয়। এজন্য নিজে কিনতে পারি না। প্রয়োজন হয় অনলাইনের সেলারদের। ফেইসবুক পাসওয়ার্ড তাদের দিতে হয় কারণ গেমটি ফেইসবুক আইডি দিয়ে খুলতে হয়। আমি আইডি পাসওয়ার্ড দেওয়া পর প্রতিবার পরিবর্তন করি।
"এরপরও ভয় লাগছিল, সে আমাকে আশ্বস্ত করল আমার আইডির কিছু হবে না। হঠাৎ করে দেখি আমার আইডি লগইন করে আইডিতে একটা খারাপ ছবি পোস্ট করেছে সে। বন্ধু বান্ধব সবাই এটা দেখে কল দিতে থাকে। বাকিটা আর বলার মতো কিছু নেই।“
অনলাইনে সংঘটিত হয়েছে এমন অনেক বিপদ সম্পর্কে ২০১৯ সালে ইউনিসেফ পরিচালিত একটি অনলাইন সমীক্ষায় সতর্ক করা হয়েছে। সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে যে, বাংলাদেশে ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৩২ শতাংশ শিশু সাইবার বুলিং এবং ডিজিটাল হয়রানির শিকার হচ্ছে। ৭০ শতাংশ ছেলে ও ৪৪ শতাংশ মেয়ে অনলাইনে অপরিচিত মানুষের বন্ধুত্বের অনুরোধ গ্রহণ করে। এমনকি জরিপে অংশগ্রহণকারীদের একটি অংশ তাদের নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলে সেই অনলাইন বন্ধুদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করার কথাও স্বীকার করে।
সরকারি পিসি কলেজ বাগেরহাটের আইসিটি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান বি.এম. মাহবুবুল আলমের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয় হ্যালোর।
তিনি বলেন "নিজের নিরাপত্তা যতটুকু সম্ভব হয় সেটা আগে নিজে করতে হবে, পাসওয়ার্ড যেন সুরক্ষিত হয়, জন্মতারিখ বা মোবাইল দিয়ে বা সহজ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা যাবে না। বন্ধু নির্বাচনেও থাকতে হবে সর্তক। ফেইসবুকে ছবি, ব্যক্তিগত তথ্য, বর্তমান লোকশন দেওয়া তো জরুরী না, তাই প্রকাশের ক্ষেত্রে ও সর্তক থাকতে হবে, যেন ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা হুমকির মুখে না পড়ে।"
বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান হ্যালোকে বলেন, “বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি ইউনিটে সাইবার মনিটরিং টিম রয়েছে। যদি কেউ সাইবার অপরাধের শিকার হয় অথবা কোথাও সাইবার অপরাধ সংঘটিত হয় তবে আমাদের নিকট এর তথ্য আসার সাথে সাথেই যথাযথ ভাবে দ্রুততার সাথে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সাইবার আপরাধের শিকার ব্যক্তিরা গোপন না রেখে যত দ্রুত সম্ভব পুলিশের সহয়তা নিবেন।
সাইবার অপরাধ বিষয়ক জনসচতনতামূলক অনুষ্ঠান 'সাইবার লাইফ' এর উপস্থাপক ও সাংবাদিক মুনজুরুল করিমের সঙ্গেও কথা হয়।
তিনি হ্যালোকে বলছিলেন, “বর্তমানে সাইবার অপরাধকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী অনেক সিরিয়াসভাবে নিয়েছে। সবগুলো থানা থেকে শুরু করে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট বিশেষভাবে গত কিছুদিন ধরে গত এক-দের বছর আগে থেকে বা তারও আগে থেকে খুবই সিরিয়াস ভাবে এটা নিয়ে কাজ করছে। এ সক্রান্ত খুবই শক্তিশালী একটা আইন আছে। এগুলো তো আক্রান্ত হয়ে গেলে এর পরের ব্যবস্থা। তবে তার আগে নিজের যেসব সচেতনতার বিষয় আছে ওগুলোতেও নজর দিতে হবে।”