সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে কুকুর নিধনের পক্ষে-বিপক্ষে নানা কর্মসূচী হয়।
এ ব্যাপারে কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে হ্যালো।
শিক্ষার্থী মাহির অর্ণব বলেন, "এরা (কুকুর) তো কারো ক্ষতি করছে না। এরা এক জায়গায় চুপচাপ বসে আছে। নিজেদের খাবার নিজেরা খুঁজতেছে।"
রাজধানীর বাসাবোর বাসিন্দা নাদিফ হোসেন বলেন, "তারা কথা বলতে পারে না। তাদের বাকশক্তি নাই। এরা হচ্ছে অবলা প্রাণি। প্রকৃতির একটা অংশ তারাও।"
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিয়ামুল হক উদয় থাকেন বাসাবোতে। তিনি নিজেও বাসায় দুইটি কুকুর পোষেণ।
তিনি বলেন, "কুকুর সরানো কোনো সমাধান হতে পারে না। এতগুলা কুকুর এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যদি যায়, দেখা যাবে সেখানকার মানুষজন বিপদে পড়ে যাবে। এছাড়াও কুকুরগুলা খাবার পাবে কি পাবে না বা না খেয়ে থাকবে নাকি!"
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আহমেদ হ্যালোকে বলেন, "বাহিরের থেকে মানুষ ঢাকায় আসে খাবারের যোগানের জন্য। এখন যদি আমরা উল্টা ওদের কাছেই কুকুরগুলা পাঠায় দেই তাহলে দেখা যাবে যে উনাদের ঘরে কুকুর অ্যাটাক করতেছে বাচ্চাদের, খাবারের জন্য। কুকুরগুলাকে ঢাকায় রেখেই পাড়া বা মহলা ভিত্তিক নির্দিষ্ট কিছুর ব্যবস্থা করলে ভালো হবে।“
খিলগাঁও বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, "কুকুর উঠাইয়া নিলে ভালো হইবো কেন। এদেরও তো একটা জীবন আছে। এইটা দেশের ঐতিহ্য। এইটা একটা পশু। এইটাও একটা সৌন্দর্য। এইটাও তো একটা দেশে থাকা দরকার। আমাদের যেমন একটা জীবন, কুকুরেরও তো তেমন একটা জীবন।"
শিক্ষার্থী আনিকা আক্তার বলেন, "পরিবেশের ক্ষেত্রে এইটা অনেক খারাপ প্রভাব ফেলবে। আমাদের মানুষ হিসাবে যেমন বাঁচার অধিকার আছে, তেমন প্রাণি হিসাবেও বাঁচার অধিকার আছে।"
সিফাত আহমেদ বলেন, "এইটা তো ঠিক হচ্ছে না। এরও একটা প্রাণ আছে। মানুষের যেই রকম একটা প্রাণ আছে।"
সিএনজি চালক রোমান বলেন, "যদি খাবারের ব্যবস্থা করে আর থাকার ব্যবস্থা করে, তাহলে সমস্যা নাই। আর না হইলে এইডি নিয়া যদি মাইরা ফেলায় তাহলে তো এইটা গুণাহের কাজ।"
তবে কারো কারো অভিযোগ রয়েছে কুকুর নিয়ে।
খিলগাঁও এলাকার ব্যবসায়ী গফুর আহমেদ বলেন, "কুকুরের কারণে রাতরে ঘুমানো যায় না। কুকুরে ইদানীং অনেক মানুষরে কামড়াইতাছে।"
খিলগাঁও এর তিলপাপাড়া এলাকার সবজি বিক্রেতা বুলবুল বলেন, "বাচ্চা গো রে কামুড় দেয়। বড় মানুষ গো রে কামুড় দেয়।"
দুর্নীতি, চুরি, জলাবদ্ধতা, যানজটের মতো সমস্যাকে বাদ দিয়ে হঠাৎ কেন কুকুরই ঢাকা দক্ষিণের প্রধান সমস্যা হয়ে গেল, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
ইতিমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম তার ফেইসবুকে কুকুর সরানোর বিপক্ষে মত দিয়েছেন। ঢাকা উত্তরের কুকুরগুলোকে বন্ধ্যাত্বকরণ ও জলাতঙ্ক টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে আশাব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে একটি বেসরকারি সংস্থা রিট আবেদনের প্রেক্ষাপটে কুকুর নিধন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। ওই বছরই ঢাকার সিটি কর্পোরেশন কুকর নিধন কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে কুকুরকে ভ্যাক্সিনেশনের আওতায় আনার কাজ শুরু করে।
তবে জাতীয় সংক্রামক ব্যধি হাসপাতালসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী শুধু ২০১৬ সালেই ঢাকায় অন্তত ১০ হাজার মানুষ কুকুরের কামড়ের পর চিকিৎসা নিয়েছে।