শিক্ষক কম থাকায় ঠিকমতো ক্লাস হছে না ঠাকুরগাঁওয়ের তিনটি মাধ্যমিক স্কুলে।
Published : 22 Mar 2017, 08:20 PM
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এই অভিযোগ করেন।
ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে কয়েকশ’ শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ বণিক সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল কামরুন নাহার।
অন্য বিদ্যালয়ের চেয়ে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থার মান ভালো এমনটা মনে করেই ভর্তি হওয়া, জানায় ও।
ও বলে, ‘ভর্তি পরীক্ষার আগে মনে করেছিলাম স্কুলে ক্লাস করেই বুঝি পরীক্ষার সিলেবাস সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। কিন্তু সেই ভরসা পাচ্ছি না।
“স্কুলে বেশি শিক্ষক নেই। একজন স্যারকেই একাধিক ক্লাস সামলাতে হয়। এজন্য পরীক্ষার সিলেবাস শেষ করার জন্য এখন কোচিংয়ে দুই বেলা পড়ি।”
কথা বলে জানা যায়, শুধু কামরুন নয় তার মতো ঠাকুরগাঁওয়ের তিনটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এখন পরীক্ষার পাঠ্যসূচি শেষ করার একমাত্র ভরসা কোচিং সেন্টার।
মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, পীরগঞ্জ বণিক সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদ ১৩ টি হলেও এর মধ্যে আছেন মাত্র চার জন। অপরদিকে রানীশংকৈল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে ১১ জনের মধ্যে রয়েছেন পাঁচ জন এবং নেকমরদ আলিমুদ্দীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৪ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন সাত জন। আর এই তিনটি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক না থাকায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়েই চলছে বিদ্যালয়ের কাজ।
এই তিনটি বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, ক্লাস না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের অনেকে মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছে, কেউ খেলাধুলায় ব্যস্ত। আবার অনেক শিক্ষার্থীকে শ্রেণিকক্ষে বসে একা একা পাঠ্যবই পড়তে দেখা যায়।
রানীশংকৈল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাসরিন আকতার বলে, ‘একজন শিক্ষককেই একসাথে একাধিক ক্লাস নিতে হয়। এক ক্লাসে লিখতে দিয়ে অন্য ক্লাসে গিয়ে পড়ান। এভাবে কোনমতে ক্লাস চলে।’
হাসনাঈন সুমি নামে আরেক শিক্ষার্থী বলে, ‘অনেক সময় গণিতের শিক্ষককে শারিরীক শিক্ষা ক্লাস নিতে হয়। এতে আমরা বইয়ের কোন অধ্যায়ে সমস্যায় পড়লেও সমাধান পাই না।’
গণিত, বিজ্ঞানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অতিথি শিক্ষকের হাতে। তারা সময় মেপে আসেন, যান। অনেক সময়ই তাদেরও পাওয়া যায় না, জানায় রাবেয়া খাতুন।
ও বলে, ‘বাধ্য হয়ে কোচিং সেন্টারে পড়তে হচ্ছে। সেখানেই ভালো মতো বুঝতে পারি।’
পীরগঞ্জ বণিক সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক শাহে আলম বলেন, ‘আমি নিজেও অপরাধবোধ করি। কারণ শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষার্থীরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ পঠন-পা্ঠন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’
শিক্ষক সংকট নিরসনে কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানোর পরও ব্যবস্থা না হওয়ায় এখন বিদ্যালয় চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে বলে জানান নেকমরদ আলিমুদ্দিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মমতাজ বেগম। প্রায় একই রকম কথা জানান অপর দুই প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রধানরা। বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং খুব শীঘ্রই শিক্ষক নিয়োগ হবে বলে মনে করছেন জেলা শিক্ষা অফিসার শাহীন আকতার।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষক সংকটে পাঠদানে সমস্যা হচ্ছে বিষয়টি আমরাও উপলব্ধি করছি। সমস্যা সমাধানের জন্য বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’