ব্রেস্ট ফিডিং: বাইরে গেলে মায়েদের ভোগান্তি

মাতৃদুগ্ধ পানের হার বাড়িয়ে প্রতি বছর সারা বিশ্বে প্রায় আট লাখ ২০ হাজার শিশুর মৃত্যু রোধ করা যায়।
ব্রেস্ট ফিডিং: বাইরে গেলে মায়েদের ভোগান্তি

নবজাতকের মায়েরা বাইরে গেলে সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানো নিয়ে ভোগান্তি পোহান। এক্ষেত্রে কর্মজীবী নারীদের ভোগান্তিটা বেশি।

২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর প্রকাশিত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সরকার পরিচালিত-নিয়ন্ত্রিত বা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, কর্মস্থল, হাসপাতাল, শপিং মল, বিমানবন্দর, বাস স্ট্যান্ড, রেলওয়ে স্টেশনের মত জনসমাগমস্থলে ‘ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার’ স্থাপনের পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাই কোর্ট।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, গণপূর্ত সচিব, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন সচিব এবং বেসামরিক কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

কিন্তু মায়েরা বলছেন, এখনো সেভাবে পরিবর্তন হয়নি দৃশ্যপট। অনেক মাকে সন্তান জন্মের পর বাসা থেকেই বের হওয়াই বন্ধ করে দিতে হয়।

শামীমা নাসরিন লাকি নামে একজন সংবাদকর্মীর সঙ্গে কথা বলে হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

তিনি বলছিলেন, "আমি সাধারণত নিজের ব্যক্তিগত কাজে বের হলে বাচ্চাকে সাথে নিয়েই বের হই। তবে বেশ ঝামেলার মধ্যে পড়তে হয় তখন। ধরেন আমি শপিংয়ে বের হয়েছি। তখন ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার খুঁজি। কিন্তু বাংলাদেশ এখনও সেই জায়গায় পৌঁছতে পারেনি।”

নিজের এক অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, “আমার পাসপোর্ট রিনিউ করতে গিয়েছিলাম। আর সেখানে গেলে তো অবশ্যই ছয় থেকে সাত ঘণ্টার আগে মুক্তি মেলে না। এদিকে আমার বাচ্চার কান্নাও আমি বন্ধ করতে পারছিলাম না। সেটাই স্বাভাবিক। বাচ্চার খাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছিল। আমি তখন ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার খোঁজা শুরু করলাম। কিন্তু পেলাম না।

“শেষে না পারতে আমি ওই অতগুলো মানুষের মাঝেই রুমের এক কোণার মধ্যে চেয়ার নিয়ে বসলাম। ওইখানেই আমি আমার বাচ্চাকে খাওয়ালাম। আমি হয়ত সেদিন এই কাজটা করতে পেরেছিলাম। অন্য কেউ সেটা নাই করতে পারত। বিব্রত বোধ করত। এটা অনেকেই পারে না। একটা মানুষের যেমন ওয়াশরুমের দরকার আছে, ঠিক তেমনি একটা মায়ের ব্রেস্ট ফিডিং কর্নারেরও প্রয়োজন আছে।"

নূরজাহান সাবা পেশায় একজন চিকিৎসক। সদ্য মা হওয়া এই নারী থাকেন রাজধানীর মধ্যবাড্ডায়। সন্তান জন্মের কয়েক দিন পর থেকেই কাজে যোগ দিলেও শিশুর যাতে মায়ের দুধের ঘাটতি না হয় তাই তিনি এখন পূর্ণ সময় চেম্বারে না বসেই বাড়ি ফিরেন।

সাবা বলছিলেন, "বুকের দুধ পাম্প করতে হয় অনেক মায়ের। আমার নিজেরই তা করতে হয়েছে। কিন্তু বাচ্চাকে খাওয়াতে বা পাম্প করতে স্পেস দরকার। মায়েদের সুবিধার জন্য সবখানে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার থাকলে মায়েরা সহজেই খাওয়াতে পারবেন।”

তানজিদা আলম লিজা নামে আরেকজন মা বলেন, “আমরা যারা পর্দা করি, তাদের জন্য বেশ মুশকিল হয়ে যায়। ধরেন কোথাও ঘুরতে গেলাম বা শপিংয়ে গেলাম তখন বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়।"

তিনি যোগ করেন, “গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গায় ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার নিশ্চিত না করাটা খুবই দুঃখজনক। আমি একজন গৃহিণী। তাই আমার হয়ত খুব একটা ঝামেলায় পড়তে হয় না। কিন্তু আমি শুধু কর্মজীবী নারীদের কথা চিন্তা করি। তাদের তো আমার থেকে বেশি কষ্ট হওয়ার কথা।”

যুক্তরাজ্যভিত্তিক চিকিৎসা বিষয়ক গবেষণা সাময়িকী দ্য ল্যানসেটের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, মাতৃদুগ্ধ পানের হার বাড়িয়ে প্রতি বছর সারা বিশ্বে প্রায় আট লাখ ২০ হাজার শিশুর মৃত্যু রোধ করা যায়; যা পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের মৃত্যুহারের প্রায় ১৩ শতাংশ।

প্রতিবেদকের বয়স: ১৪। জেলা: ঢাকা।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com