‘প্রশাসনের ভয়ে ঠিকানা বদলেও দেওয়া হয় বাল্যবিয়ে’ (ভিডিওসহ)

'বাল্যবিবাহ হয়ে গেছে এমন মেয়েরা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাচ্ছে- এই রকম খবর আমরা পাই না।'

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাল্যবিয়ের বিভিন্ন পরিস্থিতি নিয়ে হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা বলেছে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রওশন আলী।

হ্যালো: বাল্যবিয়ে বন্ধে সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে প্রশাসন নিয়মিত কোন ধরনের কাজ করছে?

মো. রওশন আলী: বাল্যবিবাহ বন্ধে সচেতনতা তৈরির জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় আমাদের উপজেলা প্রশাসন নানা কাজ করে যাচ্ছে।আমরা বাল্যবিবাহ বন্ধে এর কুফল সম্পর্কে বিভিন্ন সভায় আলোচনা করছি। আমরা সকল ধরনের সচেতনতা তৈরি জন্য কাজ করছি। এছাড়া আমরা উঠোন বৈঠক করছি। যে ধরনের সভায় অংশ নিই না কেন সেখানেও বাল্যবিবাহ বন্ধ, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস দমন, নাশকতা, মাদকদ্রব্যের কুফল সম্পর্কে আলোচনা করি। 

হ্যালো: ঠিক কী কী কারণে বাল্যবিয়ে বেশি হয় বলে আপনি মনে করেন?

মো. রওশন আলী: বাল্যবিবাহ বাংলাদেশে হয়। আমরা এটা একেবারে অস্বীকার করতে পারব না। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলায় আমরা চেষ্টা করছি বাল্যবিবাহ যাতে না হয়। এরপরও আমাদের অগোচরে স্থানীয় ঠিকানার বাইরে নিয়ে গিয়েও বাল্যবিয়ে দেওয়া হয়। খবর শুনে আমরা তাদের বাড়ি গিয়ে দেখি সেখানে তারা নেই।

তাছাড়া কম শিক্ষিত অভিভাবকের বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে জ্ঞান না থাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটে।

হ্যালো: কিশোরীর সামাজিক নিরাপত্তা না থাকায় বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটে। আপনার কী মনে হয় এই ব্যাপারে।

মো. রওশন আলী: সামাজিক নিরাপত্তা অভাব-এটা আমার কাছে মনে হয় না, সব সময় মনে হয় না। আসলে এখানে অভিভাবক যারা আছেন তাদের সচেতনতার অভাব আছে। তাদের মধ্যে কিছু কুসংস্কার রয়েছে যেটা থাকাটা ঠিক না। বর্তমান সরকার সব কিশোর কিশোরীর সামাজিক নিরাপত্তার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আমরাও কাজ করছি। কিন্তু অনেক অভিভাবকরা আমাদের এই সচেতনতার কার্যক্রমটি  উপলব্ধি করতে পারে না। উপলব্ধির অভাবে এবং কিছু ক্ষেত্রে সঠিক শিক্ষা না থাকার কারণেও বাল্যবিয়ে হয় বলে আমার মনে হয়।

হ্যালো: আপনার উপজেলায় বাল্যবিয়ে হওয়ার হার কেমন? এই পর্যন্ত কতগুলো বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছেন? বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে গেলে এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া কেমন হয়?

মো. রওশন আলী: আসলে বাল্যবিবাহের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ, যারা বাল্যবিবাহ বন্ধে কাজ করে তাদেরসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বিয়ে বন্ধ করে দেই এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করি। এরপরও বিচ্ছিন্নভাবে আমাদের না জানিয়ে ঠিকানা পরিবর্তন করে আত্মীয়ের বাড়ি গিয়ে বাল্যবিবাহ দেওয়া হয়। তবে এটার সংখ্যা খুবই কম। আমার মনে হয় না এটা উল্লেখ করার মতো। বাল্যবিয়ের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ঘটনাস্থলে চলে যাই এবং বিয়ে বন্ধ করি, আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করি।

এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সহযোগিতা পাই। দুই একটি জায়গায় সহযোগিতা না পেলেও অসহযোগিতা খুব বেশি পাই না।  এখানে অভিভাবকদের অসচেতনতা এবং কুসংস্কার এর মূল কারণ বলে আমার কাছে মনে হয়।

হ্যালো: ইতোমধ্যে বাল্যবিয়ে হয়ে গেছে এমন কিশোরীরা যাতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে এ ব্যাপারে প্রশাসনের ভূমিকা কেমন হতে পারে? আদৌ এমন পদক্ষেপ নেওয়া আছে কিনা? থাকলে সেগুলো কী?

মো. রওশন আলী: আসলে আপনারা জানেন বাল্যবিবাহ নিরোধ  আইন ২০১৭ অনুযায়ী ১৮ বছরের কম মেয়েদের ক্ষেত্রে এবং ২১ বছরের কম ছেলেদের ক্ষেত্রে বিয়ে দেওয়া হলে সেটা বাল্যবিবাহ হয়। আর আমরা সেগুলো বন্ধ করি।

বাল্যবিবাহ হয়ে গেছে এমন মেয়েরা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাচ্ছে- এই রকম খবর আমরা পাই না।

এর বাইরেও বাল্যবিবাহ বন্ধের জন্য আমাদের চমৎকার ভিজিলেন্স আছে, টিম বিল্ডিং ভালো কাজ করছে । বর্তমান সরকারের নিদের্শনা রয়েছে। বাল্যবিবাহ বন্ধে সরকার সকল ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

সরকার আমাদের নির্দেশনা দিচ্ছে, আমারও কাজ করে যাচ্ছি। এরপরও  বাল্যবিবাহ হয়ে যায়।

যেগুলো আমাদের নলেজে আসে না, বিয়ে যদি হয়েও যায় আমরা মানবিক দিকটা সব সময় দেখব।

সরকার সব সময় মানবিক। আসলে কারও ১৮ বছরের আগে বিয়ে হয়ে গেলে মেয়ের তো ব্যক্তিগতভাবে দায় থাকে না, দায় থাকে তার অভিভাবক এবং তার শ্বশুর শাশুড়ির।

সরকার সকল ধরনের মানবিক উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। আমরাও সরকারের নিদের্শনা মতে মানবিক উন্নয়নের জন্য কাজ করছি। আমরা যেকোনো ধরনের অমানবিক কাজকে বরদাস্ত করব না, সরকারও বরদাস্ত করবে না। আমরা বাল্যবিবাহ বন্ধসহ সব ধরনের মানবিক কাজের জন্য অগ্রণি ভূমিকা পালন করব।

প্রতিবেদকের বয়স: ১৬। জেলা: চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com