“যখন যুদ্ধ করতাম তখন চোখের সামনে মুক্তিযোদ্ধারা মারা যেত। মনে হতো হিমালয় পাহাড়ে যেন পিঠ ঠেকে গেছে।”
Published : 10 Mar 2024, 05:45 PM
দেশকে শক্রুমুক্ত করার জন্য ১৯৭১ সালে অন্য অনেক যোদ্ধার মতই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার আব্দুল মজিদ। এই মুক্তিযোদ্ধার জন্ম ভারতে। ভারতের কোথায় তার মনে নেই। ৫২-র আন্দোলনের আগেই পরিবারসহ এদেশে চলে আসেন। পরে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ৭ নম্বর সেক্টরের অধীনে তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেন।
হ্যালো: আপনি যখন মুক্তিযুদ্ধে যান তখন আপনার বয়স কত ছিল?
আব্দুল মজিদ: আমার বয়স তখন ছিল আনুমানিক ২৭ বছর। সঠিক জন্মসাল মনে নাই।
হ্যালো: বাড়িতে জানিয়ে যুদ্ধে গিয়েছিলেন?
আব্দুল মজিদ: না, পরিবারকে না বলেই যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য ভারতে ট্রেনিং নিতে চলে যাই।
হ্যালো: কোন তাগিদ থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করছেন?
আব্দুল মজিদ: বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনে দেশকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষার জন্য যুদ্ধে গিয়েছিলাম। সবাই যদি পালিয়ে যেত তাহলে আজ দেশ স্বাধীন হতো না।
হ্যালো: ভারতে প্রশিক্ষণকালীন কোনো স্মৃতি মনে পড়ে?
আব্দুল মজিদ: ভারতের দার্জিলিং এ যেদিন ট্রেনিং করতে গিয়েছিলাম সেদিন সেখানকার মেজর আমাকে বলেছিল, “এ খান কা লেড়কা হে।” এ কথা বলে সাতদিন চোখ কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখে। আমাকে দলে নিতে চায় না। সাতদিন পরে আমার কথা বিশ্বাস করে ট্রেনিং এ নিয়েছিল।
হ্যালো: কত নম্বর সেক্টরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন?
আব্দুল মজিদ: আমি ৭ নম্বর সেক্টরের অধীনে দিনাজপুরের হিলিতে ও পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় যুদ্ধ করেছিলাম। সাথে ইন্ডিয়ান আর্মিরাও ছিল। আমাদের গ্রুপে ২৫০ জন বাঙালি মুক্তিবাহিনী ছিলাম বাকিরা ইন্ডিয়ান আর্মি। বিভিন্ন জায়গায় গাড়িতে সেই আর্মিরা অপারেশন করতে নিয়ে যেত আমাদের।
হ্যালো: যুদ্ধের কোনো স্মৃতি মনে পড়ে?
আব্দুল মজিদ: যখন যুদ্ধ করতাম তখন চোখের সামনে মুক্তিযোদ্ধারা মারা যেত। মনে হতো হিমালয় পাহাড়ে যেন পিঠ ঠেকে গেছে। তাদের লাশ আনার ইচ্ছা থাকলেও নিজে লাশ হওয়ার ভয়ে আনতে পারি নাই।
হ্যালো: যুদ্ধের সময় কী খাবার খেতেন?
আব্দুল মজিদ: মুড়ি আর পানি খেয়েও যুদ্ধ করেছি। একবার সাত দিন কোনো কিছু খাই নাই। এক গ্রামে (নাম মনে নেই) একজনের বাড়িতে গিয়ে এক কেজি চাল ভেজে দিতে বলি কিন্তু সেই বাড়ির লোকেরা চাল ভাজার সাথে বিষ মিশিয়ে খেতে দেয় আমাদের। আমি খাই নাই। যারা খেয়েছিল তারা সবাই মারা গিয়েছিল।
হ্যালো: অপারেশনের কোনো স্মৃতি মনে আছে?
আব্দুল মজিদ: ভাদিয়া নামের ব্রিজের পাশে অবস্থান নিয়েছিল খানরা। আমরা কয়েকটি নৌকা নিয়ে নদী পার হয়ে খান সেনাদের উপর হামলা করি। এতে খান সেনারা কিছু মারা যায়, কিছু আত্মসমর্পণ করে।
হ্যালো: দেশের জন্য নিজের জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। সরকারি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন ?
আব্দুল মজিদ: মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাঁচ হাজার টাকা পাই। এমনে সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকি।
হ্যালো: ধন্যবাদ, আপনাকে।
আব্দুল মজিদ: আমি কখনো কাউকে সাক্ষাৎকার দিই নাই। অনেকে নিতে চেয়েছিল। তোমাকেই প্রথম আমার সাক্ষাৎকার দিলাম। ভালো থাকো।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৫। জেলা: ঠাকুরগাঁও। (সাক্ষাৎকারটি ২০১৫ সালে প্রকাশিত)।