বিশ্বজুড়ে

ইতিহাসে বর্বরতার সাক্ষী নাগাসাকি হামলা

হ্যা

তখন ১৯৪৫ সাল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছিল। তখন  জাপানে (স্থানীয় সময় রাত ৩টা ৪৭ মিনিটে) নাগাসাকিতে ঘুমন্ত মানুষের ওপর এই হামলা ঘটে। এই বোমা হামলা জাপানিদের জীবনে যেন অভিশাপ নিয়ে হাজির হয়েছিল।

ফ্যাটম্যান নামের বোমাটি বিস্ফোরিত হয়ে পুরো জাপানকে কাঁপিয়ে দিয়ে নাগাসাকি শহরসহ আশেপাশের এলাকাকে মৃত্যুপুরীতে রুপান্তরিত করেছিল। এই বোমার বিষক্রিয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে এবং পরবর্তী কয়েক মাস ও বছরে এই বোমার ক্ষতিকর প্রভাবে ৭০ হাজারেরও বেশি লোক মারা যায়।

এই বোমার তেজস্ক্রিয় বিকিরণের ভয়াবহতা এতই ছিল যে আজও এর পার্শ প্রতিক্রিয়া বয়ে বেড়াচ্ছেন নাগাসাকির লাখ লাখ মানুষ। শুধু তাই নয় এই বোমার তেজস্ক্রিয়তার কারণে
আজও সেখানে জন্ম হচ্ছে বিকলাঙ্গ শিশুর।

যুগ যুগ ধরে অনেকেই মনে করেন বিভীষিকাময় সেই দিনের স্মৃতি। এখনো জাপানীদের তাড়া করে সেই ভয়াল দিনের ছবি।

এর পর থেকেই প্রতিবছর জাপানে নাগাসাকি দিবস পালিত হয়ে আসছে। এ উপলক্ষে হাজার হাজার লোক নগরীতে জড়ো হয়ে বিভীষিকাময় সেই দিনের স্মৃতি ও নিহতদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

এই ঘটনার ঠিক তিনদিন আগে ৬ অগাস্ট পালিত হয় হিরোশিমা দিবস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪৫ সালের এই দিনে হিরোশিমায় যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক বোমা হামলায় নিহত লোকজনের স্মরণে প্রতিবছর হিরোশিমা দিবস পালিত হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী জাপানের এই শহরটির উপর ‘লিটল বয়’ নামে একটি বোমা ফেলে।

হিরোশিমায় বোমা বিস্ফোরণের স্থানটি ছিল বানিজ্যিক ও অফিস আদালতের স্থান। বোমা হামলার সঙ্গে সঙ্গে ৫০০ মিটার বৃত্তের মাঝে বড় বড় দালান চোখের পলকে নেতিয়ে পড়ে। পাঁচ বর্গমাইল এলাকা ছাই ও ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়।

বিস্ফোরণের সময় নগরীতে লোকসংখ্যা ছিল তিন লক্ষ ৫০ হাজার। এই হামলায় ১০ অগাস্ট পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছিল এক লক্ষ ১৮ হাজার ৬৬১ জন। যার মাঝে প্রায় ২০ হাজার সামরিক লোক ছিলেন।

এর ঠিক তিন দিন পর ৯ জুলাই জাপানের নাগাসাকিতে ‘ফ্যাটম্যান’ নামের আরেকটি বোমা ফেলা হয়। এই হামলায় আনুমানিক ৪০ হাজার মানুষ বোমা হামলায় নিহত হয়। এর পাশাপাশি ৭৪ নয়শ নয় জন আহত হয়।

এই বোমা 'লিটল বয়' থেকেও বেশি ধ্বংসাত্মক ছিল। কিন্তু হিরোশিমার মতো বানিজ্যিক এলাকায় না ফেলে ফেলা হয় একটি উপত্যকায়। তবুও ক্ষতি ছিল একই পরিমাণ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকের ঘটনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের কেন্দ্রস্থলে আক্রমণের পরিকল্পনা করে। এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফায়ারবোম্বিং ক্যাম্পেইন’ নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে জাপানের বিভিন্ন শহর ধসিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। জাপানকে আত্মসমর্পন করাতেই এই হামলা করা হয় বলে পড়েছি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয় প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের অপমান আর পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে। ১৯৩৯ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর জার্মানি পোলান্ড আক্রমণ করে এ যুদ্ধের সূচনা করে। এ যুদ্ধে জাপান জার্মানির পক্ষে অবস্থান নেয়৷ জার্মানি, ইতালি, জাপান, রোমানিয়া ও বুলগেরিয়াকে নিয়ে গড়ে উঠে অক্ষশক্তি৷ অপরদিকে আমেরিকা, বৃটেন, ফ্রান্স, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, হল্যান্ড, বেলজিয়াম, নরওয়ে ও ডেনমার্ককে নিয়ে গড়ে ওঠে মিত্রশক্তি।

একটানা দীর্ঘ ছয় বছর যুদ্ধের পরে জাপান, জার্মান ও ইতালির নেতৃত্বাধীন অক্ষশক্তি পরাজিত হয়। কিন্ত জাপান আত্মসম্পন করতে দেরি করে। যার ফলে এই হামলা করা হয়।

SCROLL FOR NEXT