অন্য চোখে

শরৎচন্দ্র, সাহিত্যের আকাশে জ্বলজ্বলে এক তারা

হ্যা

বাংলা কথাসাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের সাথে সাথে নামটি পাঠক মনে স্বাভাবিক ভাবেই উঁকি দেয়।

১৮৭৬ এর ১৫ সেপ্টেম্বর হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে তিনি জন্ম নেন। তার বাবার নাম মতিলাল চট্টোপাধ্যায়, মার নাম ভুবনেশ্বরী দেবী।

পাঁচ সন্তানের মধ্যে শরৎচন্দ্র ছিলেন দ্বিতীয়। তিনি সাহিত্যসাধনার অনুপ্রেরণা পান শৈশবকালে বাবার কাছ থেকেই। তার বাল্যকাল ও পাঠ্যজীবনের প্রথম অংশ কাটে গ্রামে। তারপর অর্থের অভাবে বিহারের ভাগলপুরের মামাবাড়িতে সপরিবারে চলে আসেন তারা।

মেধাবি হওয়ার পরও শেষ পর্যন্ত অর্থের অভাবে এফ এ পরীক্ষা দিতে না পারায় তার পাঠ্যজীবনের সমাপ্তি ঘটে। তিনি আশৈশব ভবঘুরে। যৌবনে জীবিকার তাগিদে বহুদিন রেঙ্গুনে কাটিয়েছিলেন। পরবর্তীতে বঙ্গে ফিরে বাসা বাঁধেন কখনও হাওড়ায়, পাণিত্রাসে বা কলকাতায়।

তার স্ত্রীর নাম হিরণ্ময়ী দেবী। রেঙ্গুনে যাওয়ার আগেই তিনি পুরষ্কার প্রাপ্ত ‘মন্দির’ গল্পটি লেখেন। পরে কলকাতায় ফিরে প্রকাশকের অনুরোধে আবার লেখালেখি শুরু করেন। তার অমর সাহিত্যসৃষ্টিগুলি হলো বড়দিদি, চরিত্রহীন, গৃহদাহ, দেনাপাওনা, শ্রীকান্ত, বামুনের মেয়ে, দত্তা, শেষ প্রশ্ন প্রভৃতি।

এছাড়া রামের সুমতি, বিন্দুর ছেলে, পথ-নির্দেশ,  মেজদিদি, অনুরাধা, সতী, পরেশ প্রভৃতি তার লেখা গল্প।

নাটকও লিখেছেন বেশ কয়েকটি। এর মধ্যে ষোড়শী, রমা প্রভৃতি উল্লেখ্যযোগ্য।

সমাজের কুসংষ্কার, অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি মত প্রকাশ করেছেন। শরৎচন্দ্রের কথাসাহিত্য হল আজকের গণসাহিত্যের পূর্বপুরুষ। তার মাধ্যমেই গণসাহিত্যের অবতারণা।

বাংলা সাহিত্যে তার অবদানের জন্য তিনি ‘কুন্তলীন পুরষ্কার’, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে ‘জগত্তারিণী স্বর্ণ পদক’ পেয়েছেন। ‘বঙ্গীয় সঙ্গীত পরিষদ’ তাকে সাম্মানিক সদস্যপদ প্রদান করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে ১৯৩৬ এ তাকে ডি লিট উপাধি দেওয়া হয়।

শরৎচন্দ্রের সাহিত্য সমাজের সব স্তরের মানুষের কথা বলত। এই দরদী সাহিত্যিকের শেষজীবনে ক্যানসার ধরা পড়ে। চিকিৎসা চলছিল তার। সে সময় তিনি লেখেন অতিথির স্মৃতি। অস্ত্রোপচারের চারদিন পর ১৬ জানুয়ারি, ১৯৩৮ সকাল দশটায় তার মৃত্যু হয়।

মৃত্যুর পর শরৎচন্দ্রের ছাত্রসমাজ, ছেলেবেলার গল্প, শুভদা, শেষের পরিচয়, শরৎচন্দ্রের গ্রন্থাবলী এবং শরৎচন্দ্রের অপ্রকাশিত রচনাবলী প্রকাশিত হয়। তিনি চলে গেলেন কিন্তু রেখে গেলেন তার সাহিত্য কর্ম। বাংলা সাহিত্যক্ষেত্রে তার অমর সৃষ্টি দিয়ে পাঠকের মনে তিনি চির-আসীন।

SCROLL FOR NEXT