খবরাখবর

কোভিড-১৯: মৃতদেহ সৎকারে রুপান্তরকামী নারী সঞ্জীবনী

হ্যা

চট্টগ্রামে দুই মাস এরপর ঢাকায় নয় মাস ধরে করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া মানুষের দেহকে যার যার ধর্মীয় রীতি মেনে গোসল, মৃতের পোশাক পরানোসহ সৎকার কাজের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা করছেন নিজ হাতে।

এ কাজে যুক্ত হলেন কী করে জানতে চাইলে তিনি হ্যালোকে বলেন, “আমি বান্দরবানে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের নাচ শেখাতাম। দেশে মহামারি শুরু হলে মানুষ যখন নিজের স্বজনের লাশ নিতেও অস্বীকৃতি জানায় তখন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন সিদ্ধান্ত নেয় দেশজুড়ে এই ভাইরাসে মারা যাওয়া মানুষের পাশে থাকবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়ে লাশ দাফন-কাফনের জন্য একাধিক দল গঠন করলো তারা। সুযোগটা হাতছাড়া না করে আমিও যুক্ত হয়ে গেলাম একটি দলের একজন সদস্য হিসেবে।”

সঞ্জীবনী আরও জানান, এই কাজের অংশীদ্বার হওয়ার জন্য বান্দরবান থেকে চট্টগ্রাম চলে আসেন তিনি। তারপর থেকেই শুরু হয় তার প্রাণঘাতী ভাইরাসের সঙ্গে বসবাস। যখনই মৃত্যুর খবর আসে দলের সদস্যদের সঙ্গে ছুটে যান সেখানে। এখন তিনি ঢাকায় কাজ করছেন। অ্যাম্বুলেন্সে করে শহরের অলি-গলি ও হাসপাতাল থেকে সংগ্রহ করছেন করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া মানুষের দেহ। তারপর নির্দিষ্ট কবরস্থান অথবা শ্মশানে নিয়ে করছেন তাদের জন্য শেষ কাজটুকু।

এ কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি হ্যালোকে বলেন, “আমি দেখেছি করোনায় মৃত মানুষের অনেক আত্মীয়-স্বজনরা লাশের আশে-পাশেও আসেননি, তখন আমরাই ছিলাম সেই লাশগুলোর সব থেকে আপন সঙ্গী। তখন আমার কাছে মনে হয়েছিল আমি যেন আমার আপন মানুষকে সঙ্গ দিচ্ছি, তার সুখ-দুঃখের কাঙ্গাল আমি। এ মুহুর্তগুলো আমি কখনই ভুলব না।”

নিজের পরিবার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি হ্যালোকে বলেন, “আমার পরিবার আমাকে ভালোবাসেন। আমার বিশ্বাস কোনো বিপদে তারা আমার পাশেও থাকবেন। কিন্তু তারা আমার ছোটবেলা থেকেই আমার জন্য হেয় প্রতিপন্ন হয়েছেন। তাই আমি নিজে থেকেই বাড়ি যাই না। আমি চাই না আমার জন্য মানুষ তাদের অপদস্ত করুক।”

২৬ বছর বয়সী সঞ্জীবনী পেশায় একজন নৃত্যশিল্পী এবং নৃত্যশিক্ষক। বেড়ে উঠেছেন টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স দুটোতেই প্রথম শ্রেণির সম্মান নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি।

এতদূর আসার পথটা তাকে নানাভাবে ক্ষত-বিক্ষত করেছে। সামাজিকভাবে নিপীড়ন, নিগৃত হন নানা সময়। প্রাণ নাশের হুমকিও পেতে হয়েছে তাকে।

সঞ্জীবনী প্রশ্ন রেখে বলেন, “আমি চাই সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হোক। আমিই তো এরকম শেষ মানুষ না। কেন আমরা মানুষকে তার মেধা, কাজ, আচরণ, যোগ্যতা দিয়ে বিবেচনা করতে পারি না?

কোয়ান্টাম দাফন কার্যক্রমের ইনচার্জ খন্দকার সজিবুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় হ্যালোর। তিনি বলেন, “সে মানুষ হিসেবে খুবই ভালো এবং কাজপ্রিয়। মানুষের জন্য তার কাজ করার একটা স্পৃহা আছে। তাই তাকে আমাদের টিমে যুক্ত করেছি। আমরা বিশ্বাস করি ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, লিঙ্গের উর্ধ্বে মানুষ। যার যেখানে সীমাবদ্ধতা সেখান থেকেই মানুষ ভালো ঘুরে দাঁড়াতে পারে। তাদের জন্য সুযোগ তৈরি করে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।”

SCROLL FOR NEXT