আমার কথা

দাতাগণ শিশুদের ব্যবহার বন্ধ করুন

হ্যা

তাদের হাতে নতুন কাপড়, ঈদ সামগ্রী তুলে দেওয়ার ছবি সামাজিক মাধ্যমে ব্যবহার হবে। তারপর দাতার কাজ শেষ!

উপলক্ষ ছাড়া আমরা শিশুদেরকে ভালোবাসতে পারি না, শিশুদের সাথে মিশতে পারি না, শিশুদের কাছ থেকে তাদের কষ্টের অনুভূতিগুলো জানতে চাই না। কিন্তু আমাদের সম্মিলিত ভালোবাসা, ওদের জন্য অল্প একটু ত্যাগ, আনন্দে ভরিয়ে দিতে, বদলে দিতে পারে শিশুদের জীবন। 

শিশুরা শ্রমের হাতিয়ার নয়, জাতির ভবিষ্যৎ, শিশুদের হাতে ভিক্ষার থলে নয়, চাই বই ও কলম-এই কথাগুলো কেবল আজ আমাদের মুখে ও বইয়ের পাতায় দেখতে পাই। জীবনযাপনে ওদের হাড়ভাঙা শস্তা খাটুনি কিনে নিয়ে বিত্তশালীরা আরও ফেঁপে ওঠেন।    

এখনও আমাদের দেশে অনেক শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সাথে জড়িত। অল্প বয়সে অভাব-অনটনে বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। যে বয়সে তাদের স্কুলে গিয়ে হাসি-আনন্দে বেড়ে ওঠার কথা সেই বয়স থেকে ধরতে হচ্ছে সংসারের হাল। আমাদের দেশে এখনও অনেক শিশু শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত। দেশে এখনও শিশুরা ইটভাটা, ওয়ার্কশপ, চায়ের দোকান, লেগুনার হেলপার, গৃহকর্মী, রেল স্টেশনে মুটের কাজসহ অনেক ধরনের কাজ করছে।

ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রতিবন্ধিতার শিকার হয় এরাই। এছাড়াও অনেকে মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রমের পর প্রয়োজনীয় খাবারের অভাবে অপুষ্টিতে ভোগে। মারাও যায়। আর গৃহকর্মী শিশুকে নির্যাতন করা বা মেরেই ফেলার খবরও আমরা পড়ি।   

ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত অনেক শিশুরই বাবা-মা নাই। আবার অনেক মা বাবাই অভাবের কারণে শিশুকে কাজ করতে পাঠায়। তাদের অনেক সময় পেটেভাতে কাজ করতে হয় বেতন ছাড়াই। অথচ এই বয়সে তার বই, খাতা, পেন্সিল নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা। দুরন্তপনা ও চঞ্চলতা নিয়ে মাঠেঘাটে মুক্ত হাওয়ায় ঘুড়ির মতো উড়ে বেড়ানোর কথা। হাসিখুশি ভরা আনন্দচিত্তে সহপাঠীদের সাথে পড়ায়, খেলাধুলায় মেতে ওঠার কথা।

এদের বেশিরভাগের বয়স পাঁচ থেকে ১৫ বছর। সারাদিন কাজ করে দিনের শেষে ১৫ থেকে ৬০ টাকা বা মাস শেষে তারা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পেয়ে থাকে, যা তাদের প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য। কিন্তু এ বয়সে তাদের যে একটানা খাটুনি ও পরিশ্রম করতে হয়, তাদের কতটা কষ্ট হয়, সেটার হিসাব কী কেউ রাখছে? এদের মধ্যে অনেক শিশুই আবার নানা কারণে যথাযথ সময়ের মধ্যে তাদের প্রাপ্য মজুরি পায় না।   

আমাদের দেশে একশ্রেণির মানুষ আছে, শিশুশ্রম সস্তা হওয়ায় তাদের প্রতিষ্ঠানে শিশুদেরকে নিয়োগ দিয়ে থাকে। নির্বিচারে খাটায়। এমনকি তাদেরকে নির্যাতনও করে। ফলে প্রতিদিনই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত শিশু শ্রমিকরা। অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে অকালেই ঝরে পড়ছে অসংখ্য শিশু।

অর্থাৎ, এখনো আমাদের দেশে শিশুদের জন্য রয়েছে নিরাপত্তার ও সুস্থ-স্বাভাবিক বিকাশের জন্য উপযুক্ত পরিবেশের অভাব। 

বিত্তবান অনেক মানুষ নিজের সন্তানের মতো ওদের কথা ভাবে না। তাদেরও যে ভালো খেতে, নতুন কাপড় পেতে ইচ্ছা করে, এটা মনে রাখেন না। অথচ একজন শিশু ও বড় মানুষের মধ্যে পার্থক্যটা ওই জায়গায় যে, শিশু খু্ব অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকে।

আজ বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস। এই উপলক্ষে হয়তো ঘটা করে অনেক জায়গায় অনেক অনুষ্ঠানর আয়োজন করা হবে। অনেক শিশু শ্রমিকও হয়তো এই অনুষ্ঠানগুলোতে উপস্থিত থাকবে। কাল থেকে আবার তাদের কদর কমে যাবে। আমাদের সমস্যাটা এই জায়গাটাতেই। আমরা উপলক্ষ পছন্দ করি! উপলক্ষ ছাড়া আমরা শিশুদেরকে ভালোবাসতে পারি না, শিশুদের সাথে মিশতে পারি না, শিশুদের কাছ থেকে তাদের কষ্টের অনুভূতিগুলো জানতে চাই না।

আপনারা প্রত্যেকেই যদি ঠিক এভাবেই শিশুদের সাথে মিশতে পারেন, তাদেরকে ভালোবাসতে পারেন, তাহলে খুব দ্রুতই শিশুশ্রম বন্ধ হবে। আপনাদের সহযোগিতাই পারে আজকের শিশুকে আগামী দিনের ভবিষ্যতে রূপান্তরিত করতে, বদলে দিতে পারে এই অসহায় নির্যাতিত শিশুদের জীবন, তৈরি করতে পারে একটি সু্ন্দর সমাজ।  

SCROLL FOR NEXT