আমার কথা

জিপিএ-৫ না পাওয়ারও গল্প থাকে

হ্যা

এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম নিজেও জানি না।

প্রতিদিনের মতো সকাল সকাল উঠে নামাজ পড়লাম।  

এরপর সময় যেন কাটছিল না আর। শুধু মা বাবার কথা মনে হচ্ছিল। মা-বাবার এত স্বপ্ন কি ভেঙে যাবে? দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ফেলে ফেইসবুকে ঢুকলাম।

সেখানে বন্ধুদের নানা হতাশামূলক পোস্ট। কেউ বলছে পারব কি নিজের সম্মানটা বজায় রাখতে? আবার কেউ বা বলছে জিপিএ পাঁচ না পেলে কি হবে? একজন লিখেই ফেলেছে, জিপিএ পাঁচ না পেলে ফেইসবুকেই আসবে না, কারো সঙ্গে যোগাযোগও করবে না। সবাইকে ভালো থাকার জন্য শুভ কামনা জানিয়েছে। এসব দেখে মনটা বিষিয়ে উঠল।

হঠাৎ বন্ধু তাহমিদ আমায় মেসেজ দিয়ে বলল, “বন্ধু দোয়া করিস যেন জিপিএ-পাঁচ পাই। পাড়ার সবাই যেন আমার রেজাল্টের অপেক্ষায় আছে। ভালো না হলে ঘরে টিকতে পারব না।”

আমি তাকে আর কোনো রিপ্লাই না দিয়ে ফেইসবুক থেকে বের হয়ে আসলাম। মনে হচ্ছিল হৃদপিণ্ড বের হয়ে আসবে।

ওইদিকে আম্মু নিজেও সারারাত ঘুমাননি। দোয়া পড়ছেন সারাক্ষণ। আম্মুর অবস্থা দেখে বড় আপু খুবই বিচলিত। তিনি আম্মুকে বুঝাচ্ছেন, এত চিন্তার কিছুই  নেই। কিন্তু আম্মু শোনার মানুষ নন। এসব দেখে আমার চিন্তা আরও বেড়ে যাচ্ছিল।

আমি এসবে কর্ণপাত না করে গোসলটা সেরে রুমের ফ্যান চালিয়ে শুয়ে পড়লাম। কি হবে না হবে তা ভেবে আর লাভ নেই। আমি জানি পরীক্ষা খারাপ হয়েছে। পরীক্ষার সময় খুব রাত জাগতে হয়েছে। ছোটবেলা থেকেই বোর্ড বই পড়ে পরিক্ষা দেওয়া পছন্দ করি। পরীক্ষার আগের দিন গাইড আমার পাশেই থাকে না। সেহেতু  সম্পূর্ণ বই শেষ করতে করতে রাত ২-৩ টা হয়ে যেত। আবার পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে আবার পড়া।

এত রাত জাগার ফলে পরীক্ষার হলে মাথাটা সত্যি কাজ করছিল না। 'কত বছর বয়স পর্যন্ত শিশু?' এমন প্রশ্নও আমি ভুল করেছি।

দুপুরে খাবার খেয়ে উঠলাম। ওমনি আপুর মোবাইলে রেজাল্ট এলো। রেজাল্ট দেখে সবার মন খারাপ হলো। আমি জিপিএ-৪. ৮৬ পেয়েছি। আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না। ভেবেছিলাম এ প্লাস পাব।

আমি পরিস্থিতি বুঝতে পেরে আবার গোসল করতে ওয়াশ রুমে ঢুকলাম। বাইরে কান্না করতে পারছিলাম না। কিন্তু বের হয়ে আমি অবাক হলাম। একটু আধটু বকাবকি করলেও কেউ খুব বেশি একটা বকেনি। বুঝেছি একটা জিপিএ-পাঁচের জন্য পরিবার কাউকে দূরে ঠেলে দেয় না।

SCROLL FOR NEXT