‘শিশুদের জন্য একটি পার্ক চালু করা হয়েছে সেখানে প্রতিটি শিশুরই আগ্রহ থাকবে পার্কটি নিয়ে। তাছাড়া ঈদ ও বাংলা নববর্ষের ছুটিতে সবাই যখন ঘুরে বেড়াচ্ছে, আনন্দ করছে, সেখানে শিশুদের মনও আনন্দ খুঁজবে এটাই স্বাভাবিক। এজন্যই হয়ত তারা ঢুকেছে ওই পার্কে।’
Published : 18 Apr 2024, 07:34 PM
শরীয়তপুরে জেলা প্রশাসন পরিচালিত পার্কে টিকেট ছাড়া প্রবেশ করায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে চার শিশুকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রেখে শাস্তি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এই ঘটনার সময় দর্শনার্থীদের ধারণ করা একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদনও আমার নজরে এসেছে।
সেই প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি, বৃহস্পতিবার ঈদের দিন দুপুরে এই পার্কটির উদ্বোধন করা হয়। যেখানে শিশুদের খেলার জন্য বিভিন্ন ধরনের ১৫-১৬টি রাইড বসানো হয়েছে।
শিশুদের জন্য একটি পার্ক চালু করা হয়েছে সেখানে প্রতিটি শিশুরই আগ্রহ থাকবে পার্কটি নিয়ে। তাছাড়া ঈদ ও বাংলা নববর্ষের ছুটিতে সবাই যখন ঘুরে বেড়াচ্ছে, আনন্দ করছে, সেখানে শিশুদের মনও আনন্দ খুঁজবে এটাই স্বাভাবিক। এজন্যই হয়ত তারা ঢুকেছে ওই পার্কে।
আমাদের দেশে স্কুলে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি দেওয়ার বিধান নেই। আমি আমার স্কুল জীবনে কখনো কোনো শিক্ষার্থীকে প্রকাশ্যে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখার মতো শাস্তি পেতে দেখিনি। এর কারণ একটাই, শিশুদেরও আত্মমর্যাদাবোধ রয়েছে। অথচ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার এই কাজটি দ্বারা সরাসরি শিশুদের আত্মমর্যাদায় আঘাত করলেন। তিনি শিশু নির্যাতনের মতো গর্হিত একটি কাজ করলেন।
সংবাদ প্রতিবেদন জানতে পেরেছি, পার্কে ঢুকে পড়া শিশুদের মধ্যে ১০ বছরের কম বয়সী শিশুও ছিল। তাদের কাছ থেকে পার্কের প্রবেশ ফি নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ১৩ বছরের বেশি বয়সী দুইজন শিশুকে আটক করে রাখা হয়।
কান ধরানোর পর আটক করে রেখে আর কোনো শাস্তি দেওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। কিন্তু যখন এই দুই শিশুকে পার্কে আটক করে রাখা হয় সেখান থেকে ছুটে আসার আগ পর্যন্ত তারা কী পরিমাণ মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে ছিল তা কল্পনার বাইরে।
যদিও সেই সরকারি কর্মকর্তা শিশুদের কান ধরানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এমনকি তিনি তার মতো করে একটি হাস্যকর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন তিনি সেই শিশুদের শুধু উপদেশ দিয়েছেন। আর শিশুরা হয়ত ভয়ে কানে হাত দেয়।
কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়া দর্শনার্থীদের ধারণ করা ছবি ও ভিডিও কি তাই বলে? যদিও এটি আদালতের প্রমাণ করার বিষয়। কিন্তু আমরা তো খালি চোখে এটাই দেখি যে, পাঁচ শিশু ইউএনওর সামনে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে এবং তিনি তাদের উপদেশ দিচ্ছেন। এটুকুই তো সেই শিশুদের হেয় করার জন্য যথেষ্ট।
ভুক্তভোগী শিশুদের মধ্যে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীও ছিল। তাদের সহপাঠীরা যদি তাদের কানে ধরতে দেখে তাহলে সে হয়ত লজ্জায় স্কুলেই যেতে চাইবে না। এই ভয়ে স্কুল থেকে ঝরে পড়ার মতো ঘটনাও তো ঘটতে পারে।
অপরাধ প্রমাণিত হলে এই কর্মকর্তা হয়ত শাস্তি পাবেন কিন্তু এই শিশুদের হারানো সম্মান ফিরিয়ে দেবে কে?
প্রতিবেদকের বয়স: ১৬। জেলা: ঢাকা।