
প্রতিনিধিত্বশীল ছবি
সবারই কোনো না কোনো স্বপ্ন থাকে। তেমনি আমার একটি স্বপ্ন আছে, যা আমার আবেগের সঙ্গে মিশে রয়েছে।
আমার স্বপ্ন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের একজন খেলোয়াড় হওয়া। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপ ক্রিকেটের ফাইনাল ম্যাচের খেলা দেখে ক্রিকেটের নেশায় পড়েছিলাম।
সে সময় জাতীয় দলের খেলোয়াড় লিটন কুমার দাসের 'ক্লাসিক শট'গুলো আমাকে খুব মুগ্ধ করে। আমি ও আমার এক বন্ধু ক্রিকেটের জ্বরে আক্রান্ত হই। সে জ্বর এখনো সেড়ে ওঠেনি।
ক্রিকেটার হওয়ার অদম্য ইচ্ছা নিয়ে ভর্তি হই ভাওয়াল রাজবাড়ি মাঠে গড়ে ওঠা গাজীপুর ক্রিকেট একাডেমিতে। সেখানকার কোচ রিপন স্যারের কাছেই আমার প্রাতিষ্ঠানিক ক্রিকেটের হাতেখড়ি।
দেড় বছর ভালোই চলছিল ক্রিকেট প্র্যাকটিস। কিন্তু ২০২২ সালটা আমার জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়ায়!
করোনাভাইরাসের প্রকোপে দীর্ঘ ১৮ মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর যখন স্কুল খোলা হলো তখনই প্রথম সাময়িক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘদিন পর পড়াশোনায় ফেরার কারণে পরীক্ষার ফলাফল খানিকটা খারাপ হয়।
তখনও আমি প্র্যাকটিস চালিয়ে যাচ্ছি। এরপর ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গেলে এলাকার কয়েকজন আমার বাবাকে বলে যেন আমাকে ক্রিকেট খেলতে না দেওয়া হয়, এভাবে পড়াশোনার ক্ষতি হয়। বাবা তাদের কথা কানে তুলে এবং আমার ক্রিকেট খেলা বন্ধ করে দেন।
সেদিন আমি আমার জীবনে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় কেঁদেছিলাম। এরপর শহরে ফেরার পরও আমি দমে থাকিনি। কয়েকজন আত্মীয়ের মানসিক সহযোগিতা পেয়ে কিছুদিন খেলা চালিয়ে গিয়েছি।
এরপর পরিবার থেকে বলা হয় যে, ক্রিকেট খেলা চালিয়ে গেলে পড়াশোনা বন্ধ করে দেবে। তখন আমার আর কিছুই করার ছিল না।
নিজ শহর গাজীপুর ছেড়ে রাজধানী ঢাকায় পাড়ি জমাই। বন্ধ হয়ে যায় আমার খেলা। তবে আমি এখনো প্রাণপণে ক্রিকেট খেলায় ফিরতে চাই। লুকিয়ে ঘরের মধ্যে আমি এখনো বিভিন্ন শটের 'শ্যাডো প্র্যাকটিস' করি।
আমার এক বন্ধুর সঙ্গেও একই রকমের ঘটনা ঘটেছে। আমি আমার আশেপাশে এমন অনেক ঘটনা ঘটতে দেখেছি।
এসব ঘটনা দেখার পর মনে প্রশ্ন জাগে, আমাদের দেশের পারিবারিক সংস্কৃতি এমন কেন? আমরা এ দেশের শিশুরা কি নিজের স্বপ্ন পূরণে পরিবারের বাধার বদলে সহযোগিতা পেতে পারি না?
সবাই যদি চিকিৎসক, বৈমানিক, প্রকৌশলী হয় তাহলে শিক্ষক কে হবে, খেলোয়াড় কে হবে? অথবা লেখক, পরিচালক, অভিনেতা, মুচি, নাপিত, কুমার, ব্যবসায়ী কারা হবে? উন্নত দেশে তো এই পেশাগুলোও বেশ মূল্যবান।
আমরা শিশুরা নিজেদের স্বপ্ন পূরণে পরিবারকে পাশে পাই না। পরিবারের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কথা বললে আমাদের 'অবাধ্য' তকমা পেতে হয়। অভিভাবকেরা বলেন ''আমরা খরচ চালাই, সিদ্ধান্ত আমরাই দিব।''
অভিভাবকদের উচিত সকল পেশাকে সমান চোখে দেখা এবং শিশুদেরকে তাদের স্বপ্নের পথে চালিত করা। স্বপ্নের পথেই সম্ভাবনা থাকে। এতে জীবনকে উপভোগ করা যায় এবং সফলতা পাওয়া যায়।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৩। জেলা: ঢাকা।