কর্মক্ষেত্রে কি মেয়েরা পিছিয়ে? (ভিডিওসহ)

আমাদের পুরুষ শাসিত সমাজে নারীদের সবসময় শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল মনে করা হয়।

প্রতিবছরের জেএসএসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর দেখা যায় ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের পাশ এবং জিপিএ-৫ পাওয়ার হার বেশি।

সংবাদের শিরোনাম হয়, ‘জেএসসি/এসএসসি/এইচএসসিতে এবারও এগিয়ে মেয়েরা’। গত কয়েক বছর ধরেই মেয়েরা এমন সাফল্যজনক ফলাফল করছে। কিন্তু পরীক্ষার ফলাফলে এগিয়ে থেকেও এবং মেয়েদের জন্য নির্ধারিত কোটা থাকলেও কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো নয়!

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ১১টি বোর্ড থেকে অংশ নেওয়া ১৯ লাখ ৯৪ হাজার ১৩৭ জনের মধ্যে পাস করে ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৯ জন।

তাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন। পাসের হার এবং জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা দুদিকেই এগিয়ে আছে মেয়েরা। ছাত্রদের পাসের হার যেখানে ৮৭ দশমিক ১৬ শতাংশ, সেখানে ছাত্রীদের মধ্যে ৮৭ দশমিক ৭১ শতাংশ পাস করেছে। আবার জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৪৬ জন ছাত্রী এবং ১ লাখ ২১ হাজার ১৫৬ জন ছাত্র।

২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় ২২ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৫ জন শিক্ষার্থী, যাদের মধ্যে পাস করেছে ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪৬ জন। সেখানেও পাসের হার এবং জিপিএ ৫ পাওয়ার সংখ্যায় এগিয়ে মেয়েরা। ছাত্রদের পাসের হার যেখানে ৯২ দশমিক ৬৯ শতাংশ, সেখানে ছাত্রীদের মধ্যে ৯৪ দশমিক ৫০ শতাংশ পাস করেছে। জিপিএ ৫ পাওয়া ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭৯ হাজার ৭৬২ জন ছাত্র এবং ১ লাখ ৩ হাজার ৫৭৮ জন ছাত্রী। এর আগের বছরগুলোর ফলাফলগুলোতেও দেখা যায়, এগিয়ে আছে মেয়েরা।

আমাদের পুরুষ শাসিত সমাজে নারীদের সবসময় শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল মনে করা হয়। একটা মেয়েও যে ছেলেদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চাকরি কিংবা ব্যবসা বা অন্য কাজ করতে পারে তা অনেকের ধারণারও বাইরে। তারা মেয়েদের কাজ বলতে শুধু ঘরের কাজকেই বুঝে থাকে।

স্বামী স্বাবলম্বী হলে মেয়েদের চাকরি করার দরকার কী- এমন ধারনা আমাদের সমাজের প্রায় প্রতিটি মানুষের। ঘরের বউ বাইরে কাজ করলে সংসার সামলাবে কে, সন্তান মানুষ করবে কে ইত্যাদি নানা কথা বলে থাকেন তারা।

কিন্তু কর্মজীবী নারীদের অধিকাংশই সংসার, সন্তান সামলিয়ে পরেই কাজে যান। তারা যেমন কর্মক্ষেত্রে পরিশ্রম করেন তেমনি বাদ দেন না ঘরের কাজও। তবুও নারী আজও সমাজে অবহেলিত।

কর্মক্ষেত্রে নারীদের সাথে নানা ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। পুরুষের তুলনায় নারীর কম মজুরি পাওয়ার ঘটনা সবার জানা। যদিও বর্তমানে ধীরে ধীরে তা কমছে। মাতৃত্বকালীন ছুটিতে নারীরা ৬মাস কিংবা ৩মাস অফিসের বাইরে থাকার কারণে নারীদের পদোন্নতি পিছিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। শুধুমাত্র নারী হওয়ার কারণেই তারা পদন্নোতি পান না। অনেক সময় ইভটিজিং এর মতো ঘটনাও ঘটে থাকে। এসব কারণে অনেক সময় নারীরাও কাজের প্রতি অনিহা প্রকাশ করে থাকেন।

ধর্মীয় নানা কুসংস্কারের কারণেও নারীরা পিছিয়ে যাচ্ছে। একসময় মেয়েদের ঘরের বাইরে বেরিয়ে পড়াশোনা করা পর্যন্ত বন্ধ ছিল। এখন নারীরা পড়াশোনার সুযোগ পেয়ে পাবলিক পরীক্ষায় সাফল্যজনক ফলাফল করার পরও ধর্মীয় গোঁড়ামির কারণে অনেক মেয়ে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করতে পারছে না।  

পুরুষদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে অনেক নারী মানসিক চাপের সম্মুখীন হন। মানসিক চাপের হরমোন কোর্টিসল কর্মক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নারীদের মধ্যে বেশি পাওয়া যায়। পুরুষ শাসিত সমাজে নারীরা অনেক সময় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন।

সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও নারী হওয়ার কারণে অনেকে বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে থাকেন। ভিড় ঠেলে সংবাদ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না অনেক নারীর। কখনও কখনও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নিউজ কভার করার জন্য পুরুষ সাংবাদিকদের পাঠানো হয়, নারীদের সুযোগ দেওয়া হয় না।

প্রতিবেদকের বয়স: ১৫। জেলা: জামালপুর।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com