সমাজের কাছে এটাকে বিয়ে বলে মনে হলেও আমাদের কাছে এটিকে একটি মৃত্যুর মতো ঘটনা বলে মনে হয়েছিল।
Published : 13 Mar 2024, 01:45 PM
সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় মেয়েটার সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটে। অল্প কয়েক দিনেই আমাদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব হয়। তারপর ধীরে ধীরে তাকে আরও ভালো ভাবে জানতে পারি।
এক সময় বুঝতে পারি, তার জীবন আমাদের জীবনের মতো এত সহজ নয়।
সে যখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে, তখনই তার বাবা মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। সে আর তার ছোট ভাই, বাবার কাছে সঙ্গে থাকতে শুরু করে। এদিকে তার বাবা পুনরায় বিয়ে করেন।
বাবা তাদের ভাই বোনের তেমন যত্ন নিতেন না। পরিবার একমাত্র আপন বলতে ছিল তার ছোট ভাই।
এত কিছুর মাঝেও সে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায়। নবম শ্রেণিতে উঠে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়।
এ সময় পরিবার থেকে বলা হতে থাকে, মেয়ে বড় হয়ে গেছে। বিয়ে দিয়ে বিদায় দিলেই তো হয়।
পরিবার, আত্মীয়জন আর পাড়া পড়শির চাপে বিয়ে রাজি হতে হয় তাকে। পরিবার অন্য জায়গায় থেকে তার বিয়ের কাজ সম্পন্ন করে। তারপর থেমে যায় তার পড়াশোনা।
বিয়ের আগে সে আমাদের বলেছিল, “আমার আর বাঁচার ইচ্ছে নাই। ছোট ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু করতে পারলাম না।”
সমাজের কাছে এটাকে বিয়ে বলে মনে হলেও আমাদের কাছে এটিকে একটি মৃত্যুর মতো ঘটনা বলে মনে হয়েছিল।
বিয়ের পর তার বিয়ের কিছু ছবি দেখেছিলাম। তার বরের বয়স তার চাইতে অনেক বেশি বলে মনে হয় আমার।
বাল্যবিয়ের এই ঘটনাটা আমাকে অনেক নাড়া দিয়েছে। এর আগে বইপত্রে বাল্যবিয়ের কথা শুনলেও, বাল্যবিয়ের গল্প কতটা নির্মম তা বুঝেছিলাম এই ঘটনার পর থেকে।
এই বিয়ের জন্য মেয়েটার জীবন নিমিষেই অন্ধকার হয়ে গেল। সমাজের কেউই এগিয়ে আসল না। সবার যেন একটাই কথা, ওর পরিবার ওরা বুঝুক; আমরা কেন শুধু শুধু ঝামেলা নিব?
প্রতিবেদকের বয়স: ১৪। জেলা: সিরাজগঞ্জ।