মানুষ হিসেবে আমার যে অধিকার সেটা পেতে হলে যদি বিবেচনা করা হয় আমি কোন লিঙ্গের, তাহলে এটা যে কোনো সমাজ ও দেশের জন্য দুঃখজনক। কিন্তু এটাই সত্য যে আমাদের সমাজে প্রচলিত রীতি-নীতি, প্রথা ও আইন-কানুন নারীর প্রতি চরমভাবে বৈষম্য করে আসছে।
অনেকেই বলে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার চাই। এই স্লোগানে নারীর অধিকারের গুরুত্বটাই মূলত বোঝানো হয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয় এটা পুরোপুরি সত্য না। কারণ, নারীকে সমান অধিকার দেওয়ার আগে তার প্রাপ্যটুকু দেওয়া উচিত।
নারী তো যুগ যুগ ধরে নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছে, তারা অনেকক্ষেত্রেই এগিয়ে যেতে পারেনি, তাদের দমিয়ে রাখা হয়েছে। তাই সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে নারীর প্রতি সংবেদনশীল হওয়ার বার্তা আগে ছড়িয়ে দিতে হবে।
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘নারী’ কবিতায় লিখেছেন, ‘আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই!/ বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’
কবির ভাষ্যে এই বিশ্বের কল্যাণকর কাজগুলো অর্ধেক করেছে নারী, অর্ধেক করেছে পুরুষ। তাই এখানে কোনো ভেদাভেদ নেই। কিন্তু নারীর অবদানের কথা আমরা স্বীকার করতে চাই না।
কৃষি প্রধান এই দেশে নারীদের বড় একটা সংখ্যা কৃষি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। আমাদের গ্রামাঞ্চলে নজর দিলেই দেখতে পাব নারীরা ফসলের বীজ সংরক্ষণ করছে, প্রক্রিয়াজাত করছে, মাঠের কাজও করছে।
হাঁস-মুরগি, গরু, ছাগল পালনে নারীরাই এগিয়ে রয়েছে। কিন্তু নারীকে আমরা কৃষক বলে মর্যাদা দিতে চাই না, কৃষিকাজে নারীর অবদানকে স্বীকৃতি দিতে চাই না।
দেশের প্রতি নারীর অবদান কতটুকু তা আমাদের গার্মেন্টস বা তৈরি পোশাক শিল্পকে দেখলেই বোঝা যায়। আমরা আজ এই শিল্পের মাধ্যমেই বড় অংকের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছি, যে শিল্পকে সমৃদ্ধ করেছে সেলাই দিদিমণিরা।
কিন্তু মূলকথা ঘুরে ফিরে ওই একই, নারী ভালো করছে এটা না দেখে আমরা এসব চর্চায় ব্যস্ত যে- নারী এটা করবে, ওটা করতে পারবে না, নারীর পোশাকের দৈর্ঘ্য এতটুকু হবে, নারী বাইরে চাকরি করতে পারবে না, নারীর জন্য সমাজ ধ্বংস হচ্ছে ইত্যাদি।
নারীকে ঘরে কোণঠাসা করে রেখেই যেন দৌড়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে সবাই। কিন্তু এভাবে কি একটি জাতি এগিয়ে যেতে পারে বা সভ্য ও সমৃদ্ধ হতে পারে?
দেশে সর্বশেষ জনশুমারি ও গৃহগণনা অনুসারে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা ১৬ লাখ ৩৪ হাজারের বেশি। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে আমরা কি আসলেই এগিয়ে যাওয়ার দৌড়ে জিততে পারব?
প্রতিবেদকের বয়স: ১৪। জেলা: গাজীপুর।