বর্ষা মানব হৃদয়কে ভাবাবেগে আপ্লুত করে, একই সঙ্গে করে তোলে সজীব ও স্মৃতিকাতর, নিঃসঙ্গানুভূতিতে জর্জর ও সৃষ্টিমুখর- তারই মর্মকথা ব্যক্ত হয়েছে এ রচনায়। পড়তে পড়তে হঠাৎ চোখ পড়ল একটি বিশেষ চরণে, ‘মেঘৈর্মেদুরম্বরং বনভূবশ্যামাস্তমালদ্রুমৈঃ’
কী আশ্চর্য এক চরণ। দেখে মনে হয় কত কী লেখা এই বাক্যে। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না। চরণটির পর পরই লেখা 'গীতগোবিন্দের এই প্রথম চরণ যে বাঙালি একবার শুনেছে চিরজীবন সে আর আর তা ভুলতে পারবে না।'
এই লেখাটা পড়ার পর আমার কৌতূহলী মন আরো দ্বিগুণ কৌতূহলী হয়ে উঠল। মনে প্রশ্নের সঞ্চার হতে লাগল, কী অর্থ এই চরণের? কী বিশেষত্ব এর? কেনোই বা এই কথাটি বলা হলো যে কোনো বাঙালি একবার শুনলে চিরজীবন আর ভুলতে পারবে না?
আমি স্বভাবত অলস হলেও কোনো বিষয় নিয়ে জানার ইচ্ছা হলে, কৌতূহল থাকলে সেই বিষয়ে অনেক অনুসন্ধান করি। সঠিক তথ্য না পেলে মনস্থির হয় না। তো এই বিষয়েও অনেক লেখা পড়লাম কিন্তু কোথাওই পেলাম না।
অনেক চেষ্টা করেও কিছুই পেলাম না। আমার সংস্কৃত শেখার ইচ্ছা ছিলো বহু আগে থেকেই। একবার ভাবলাম সংস্কৃত শিখি এখনই তাহলে হয়ত বুঝতে পারব এর অর্থ। কিন্ত দুম করেই তো শেখা সম্ভব না। মনটা খারাপ হলো।
তারপর হঠাৎ মনে পড়ল লেখকরা নানা বিষয়ে অনেক পড়াশোনা করেন, উনাদের তো জানার কথা। এই ভেবেই যোগাযোগ করলাম এপার বাংলা এবং ওপার বাংলার জনপ্রিয় লেখক এবং মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের সাথে। কুশল বিনিময় এর পরই জিজ্ঞেস করলাম এই চরণের অর্থ কী, ব্যাখ্যা কী? জানলাম সংস্কৃত এই শ্লোকে বর্ষার চিরচেনা ছবি, মেঘে ঢাকা কোমল আকাশ আর শ্যাম শোভাময় বন তমালের লাবাণ্যভরা রূপের কথা বলা হয়েছে!
উত্তরটা শুনে কিছুটা বুঝলাম তারপর আরো কিছু ব্যাখা বিশ্লেষণ শোনার পর যা বুঝলাম তা তে কিছুটা বিস্মিতই হলাম। ছোট্ট এই চরণে বর্ষার সার্বিক চিত্র কী সুনিপুণ ভাবেই না ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
এই মেঘে ঢাকা কোমল আকাশ আর শ্যামশোভাময় বন তমালের বর্ষাস্নাত এ দৃশ্য যে প্রতিটি বাঙালির চিরচেনা। সত্যিই তো এই দৃশ্য কী কোনো বাঙালির পক্ষে ভোলা সম্ভব? যে বাঙালি একবার এই চরণ শুনেছে এবং বুঝেছে, তার জীবনে যতবার বর্ষা আসবে তার মনে বেজে উঠবে 'মেঘৈর্মেদুরম্বরং বনভূবশ্যামাস্তমালদ্রুমৈঃ!'