শৈশব স্মৃতি জুড়েই হারানো সেই বিল

আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা গ্রামে। মানুষ, পরিবেশ, প্রকৃতি সব কিছুই আমাকে খুব গভীরভাবে আকৃষ্ট করে।
শৈশব স্মৃতি জুড়েই হারানো সেই বিল

সময়টা ২০১০ সাল। আমার ছাত্রজীবনের শুরু সেবছর। প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হলাম। আমার বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। এর মধ্যে দেড় কিলোমিটার সড়ক গেছে বিলের মাঝ দিয়ে।

সেই পথ ধরেই আমি স্কুলে যেতাম। বর্ষাকালে সকাল বিকাল দেখতাম রাস্তার দুপাশে শিশু কিশোররা বড়শি নিয়ে মাছ ধরত। মাঝে মাঝে আমি নিজেও সেখানে মাছ ধরতাম। 

বর্ষার মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎ করেই বিলে পানি বৃদ্ধি পেলে আমার স্কুলে যাওয়ার রাস্তা ডুবে যেত পানিতে। হাঁটুজল পেরিয়ে যেতাম স্কুলে। ধীরে ধীরে আরও পানি বৃদ্ধি পেলে নৌকা হয়ে উঠত প্রধান বাহন। 

এই বিলের সঙ্গে সম্পর্কটা আমার বেশ জোড়াল। কখনো পানিতে নেমে লাফঝাঁপ, কখনো জাল দিয়ে মাছ ধরা, কখনো শাপলা ফুল তোলাসহ নানা দুরন্তপনায় বর্ষার সময়গুলো উদযাপন করতাম।

বর্ষা শেষে যখন বিল শুকিয়ে যেত, তখন সেখানে চাষাবাদ করা হতো। তাড়াতাড়ি স্কুলে পৌঁছানোর জন্য ফসলি জমির আইল দিয়ে স্কুলে যেতাম। ওটা ছিল তাড়াতাড়ি ও সহজে যাওয়ার পথ। 

যে বিলের সাথে আমার এত সুখস্মৃতি সেটি এখন অস্তিত্ব সংকটে। যার যার জমি ভাগ করে এখানে পুকুর তৈরি করা হচ্ছে, আলাদা করে সীমানা দেওয়া হচ্ছে। ১০/১১ বছরের ব্যবধানে কয়েকশ পুকুর হয়ে গেছে। কোথায়ও ফসলি জমি ফাঁকা নেই, আর বড়শি নিয়ে শিশু কিশোরদের মাছ ধরতে দেখা যায় না, বিলে পানি আসে না, বিলে আর নৌকা চলে না, শাপলাও ফোটে না। ব্যবসায়িক স্বার্থে সবই এখন বদলে গেছে। 

সব পুকুর হয়ে গেলেও কী হবে, চোখ বন্ধ করলে এখনো আমি দেখতে পাই আমাদের সেই বিলকেই। আমি কোনোদিন ভুলতে পারব না সেই স্মৃতি।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com