ভিডিও গেমসের এপিঠ-ওপিঠ

ছোট থেকে বড় প্রায় সবাই এখন আমরা ভিডিও গেম খেলি। গাড়িতে, বাড়িতে যেখানেই সুযোগ পাই শুরু হয়ে যায় আমাদের খেলা।
ভিডিও গেমসের এপিঠ-ওপিঠ

বিনোদন লাভের জন্য এটি দরকার আছে, কিন্তু যেভাবে অনবরত ফোন, ট্যাব বা কম্পিউটারের পর্দায় সময় দিচ্ছি এটি ডেকে আনতে পারে বড় রকমের ক্ষতি। 

বাস্তব ধরনের চিত্র আর গল্প এসব গেমকে দিয়েছে জৌলুশ। যেটা আমাদেরকে আকৃষ্ট করে। গেমে ঢুকে গেলেই মনে হয় অজানা পুরো পৃথিবীটা এখন আমার হাতে। দৌঁড়ানো, মারামারি, লক্ষ্য পূরণ, খাওয়া-দাওয়া কী নেই এসব গেমে!

আমার দৃষ্টিতে এই গেমগুলোর কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। গেমগুলো আমাদের ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করে। একটি ভাষা শেখার জন্য যে সকল দক্ষতার প্রয়োজন হয় তা হলো- কথা বলা, শোনা, পড়া ও লেখা। পৃথিবীর বেশিরভাগ বিখ্যাত গেমের মূলভাষা হলো ইংরেজি এবং সব গেমেই কোনো বিশেষ লেখা, সংলাপ, এবং নিদের্শনা লেখা থাকে ইংরেজিতে। এর ফলে যারা ইংরেজি ভাষায় দুর্বল তাদের পড়ার দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। কারণ এগুলোতে অনেক কঠিন কিছু শব্দ থাকে যা না জানলে বা না বুঝলে পরবর্তী ধাপে বা চেকপয়েন্টে যাওয়া সম্ভব হয়না। এছাড়া কথোপকথনের মাধ্যমে ভাষা বোঝা ও শোনার দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। 

শুধু তাই নয়, গেমগুলোতে নানা সমস্যা ও জটিলতা থাকে যেগুলোকে বলা হয় মিশন। এগুলো কাটিয়ে উঠতে অনেক বুদ্ধি ও ধৈর্য্য প্রয়োগ করতে হয়। স্মৃতিশক্তির একটি চর্চাও হয় এসব গেমে।

আমি শুনেছি, উন্নত দেশগুলোর অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভিডিও গেম খেলতে দেওয়া হয়। যা তাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ক্ষেত্রে সাহায্য করে। আমরা পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে পড়াশোনা করি। সেগুলোকে যদি গেমের মাধ্যমে দেখানো হয় তাহলে বিষয়গুলো আরো ভালোভাবে আমাদের মনে থাকবে।

ভিডিও গেমগুলোর যেমন উপকারি দিক আছে তেমনি আছে নেতিবাচক নানা দিকও। এগুলোর সবচেয়ে নেতিবাচক দিক হলো গেমগুলো সহিংসতা প্রদর্শন করে। পাবজি, কল অব ডিউটি, ফ্রি ফায়ারের মতো গেমগুলোতে অত্যাধিক মাত্রায় সহিংসতা দেখানো হয়। কারণ এখানে সব খেলোয়াড়কে হত্যা করে নিজে টিকে থাকতে হয়। আরও কিছু গেম আছে যেগুলো সহিংসতা, ধ্বংসাত্মক আচরণ ইত্যাদি শেখায়।

শুধু তাই নয়, এই গেমগুলো ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি করে। অনেক ভিডিও গেম তৈরি হয়ে থাকে বেপরোয়া গাড়ি চালানো, হত্যা, ডাকাতি ইত্যাদিকে লক্ষ্য করে। 

আমরা যখন এসব খেলায় ডুবে থাকি তখন চারপাশে কিছু খেয়াল করি না। এর ফলে আমাদের মধ্যে পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা তৈরি হচ্ছে। বাবা-মায়ের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ রয়ে যাচ্ছে এর অন্তরায়। শুধু তাই নয় শারীরিক কসরত থেকেও আমরা দূরে সরে যাচ্ছি। যেগুলো আমাদের শরীরের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে।

ভিডিও গেম কোনো অপরাধ নয়। কিন্তু যদি সেটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে তা মাদকদ্রব্যের চেয়েও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করি আমি।  

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com